অবৈধ সিগারেট আটকে অভিযান চলছে, এগিয়ে খুলনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: অবৈধ সিগারেট আটকে সারাদেশে অভিযান চলছে। দেশের ১১টি ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করছেন। বিশেষ করে যেসব জায়গায় সিগারেট মজুত, সরবরাহ ও বিক্রি করা হয়, সেসব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত সারাদেশে অভিযানে বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রায় আড়াই লাখ স্টিক সিগারেট আটক করা হয়েছে। আটকের তালিকায় ঢাকা ভ্যাট পশ্চিম কমিশনারেট শীর্ষে রয়েছে। আর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে খুলনা ভ্যাট কমিশনারেট। আবার ঢাকার বাইরে কমিশনারেটের মধ্যে খুলনা ভ্যাট কমিশনারেট শীর্ষে। আর পিছিয়ে রংপুর ভ্যাট কমিশনারেট।

আটক করা সিগারেটের মধ্যে রয়েছেÑপাট্রন, মন্ড, অরিচ, ইজি, মালব্রো, ডানহিলম ৫৫৫, ৯৯৯, ৩০৩, ব্লাক, এক্সসো, গুডাং গ্রাম, বরকুম চেরি, মেভিস, বিএসএস, সিগার, বেনসন, চেনজাং, উলসন ল্যান্ড এম, ত্রি জিরো ত্রি, মডার্ন, ডাবল হ্যাপিনেস প্রভৃতি। এসব সিগারেট অবৈধভাবে দেশে আসে। আবার দেশেও এসব সিগারেট তৈরি হচ্ছে। এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সিগারেট মার্কেটের ৭-৮ শতাংশ অবৈধ এসব সিগারেটের দখলে রয়েছে। এসব সিগারেট বিক্রির ফলে রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।

এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা ভ্যাট দক্ষিণ কমিশনারেট ১৯ হাজার ৩৩৩ স্টিক, ঢাকা ভ্যাট পশ্চিম কমিশনারেট এক লাখ ২ হাজার ৪৪০ শলাকা, রংপুর ৬ হাজার ৪০০ শলাকা, যশোর ১০ হাজার ৫৮০ শলাকা, ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেট ১০ হাজার ৮৬০ শলাকা, খুলনা ৭১ হাজার ৪৮৫ শলাকা সিগারেট আটক করেছে।

খুলনা ভ্যাট কমিশনারেটের সোমবারের হিসাব অনুযায়ী, এই কমিশনারেটের আওতাধীন জেলাগুলোর বাজার ও মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করছেন ভ্যাট কর্মকর্তারা। এতে গতকাল সোমবার পর্যন্ত বিভিন্ন ব্রান্ডের ৭১ হাজার ৪৮৫ স্টিক অবৈধ সিগারেট আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা জেলায় ২২ হাজার, বরিশালে ১৯ হাজার ৯১৮, পিরোজপুর ১৩ হাজার ১৭৬, ঝালকাঠি ৩ হাজার ১১৬, মাদারীপুর এক হাজার, শরীয়তপুর ১২ হাজার ২৭৫ স্টিক অবৈধ সিগারেট আটক করা হয়েছে।

এনবিআর সূত্রমতে, ‘স্থানীয় বাজারে অবৈধ বিদেশি সিগারেটের সহজলভ্যতা ও সরবরাহ বন্ধের প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা’ নিতে এনবিআর থেকে সব ভ্যাট কমিশনারকে নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। ২৮ মার্চ দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি সিগারেট পাওয়া যাচ্ছে বলে এনবিআর জানতে পেরেছে। সিগারেটের আমদানি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত এক বছরে বিদেশি কোনো সিগারেট বৈধভাবে আমদানি হয়নি। এরপরও ঢাকাসহ সব জেলা, উপজেলা এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারেও এসব বিদেশি সিগারেট পাওয়া যাচ্ছে। উল্লেখ্য, বিদেশি সিগারেটগুলো স্থানীয় সিগারেটের ‘প্রিমিয়াম স্তর ও উচ্চস্তর’ সিগারেটের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় ধূমপায়ীরা বিদেশি সিগারেটগুলোকে ‘প্রিমিয়াম স্তর ও উচ্চস্তর’-এর পরিপূরক হিসেবে গ্রহণ করছেন। আইন ও বিধি না মেনে আনীত সব সিগারেট বাজারজাতকরণের ফলে আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। আরও বলা হয়েছে, কাস্টমস আইন, আমদানি নীতি আদেশের বিধান লঙ্ঘন করে বিদেশি সিগারেট আমদানি, উৎপাদন, সরবরাহ, বাজারজাত ও বিক্রয় করা চোরাচালান হিসেবে গণ্য এবং আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ। এছাড়া ব্যান্ডরোলবিহীন কিংবা জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট-বিড়ি তৈরি, মজুত, সরবরাহ, বিক্রয় ও ব্যবহার দণ্ডণীয় অপরাধ। সেজন্য স্থানীয় পর্যায়ে সিগারেট খাতে সরকারের রাজস্ব সুরক্ষার জন্য অবৈধ বিদেশি সিগারেটের আমদানি, সরবরাহ ও বাজারজাতকরণ বন্ধে অভিযান এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা এনবিআরকে অবহিত করার অনুরোধ হয়।

অন্যদিকে, স্থানীয় বাজারে অবৈধ বিদেশি সিগারেটের সহজলভ্যতা ও সরবরাহ বন্ধের প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আধা সরকারিপত্র (ডিও লেটার) দিয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। ২ এপ্রিল এই ডিও লেটার দেয়া হয়। মূলত মন্ত্রিপরিষদ সচিব জেলা প্রশাসকদের জেলা চোরাচালান টাস্কফোর্সের মাধ্যমে অবৈধ সিগারেটের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়ে এই চিঠি দিয়েছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০