বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ জগৎজ্যোতি দাসের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিল হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুল জীবনেই জগৎজ্যোতি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করার পর সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে পড়ার সময় তিনি ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সঙ্গে তার যোগাযোগ ও দাস পার্টির জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করতেন। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ৩৬ জন মুক্তিযোদ্ধা বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে টেকেরঘাট সাব-সেক্টরে যুক্ত হন। এই গেরিলা দলের অধিনায়ক ছিলেন জগৎজ্যোতি দাস। ভাটি অঞ্চল মুক্ত রাখার পাশাপাশি তাদের বিশেষ দায়িত্ব ছিল ভৈরব-আজমিরীগঞ্জ-শেরপুর এলাকায় নদীপথ পাকিস্তানি সেনাদের জন্য বিপদসংকুল করে তোলা। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের জয়কলস ব্রিজ পাকিস্তানি বাহিনীর লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ছিল। সেই পথে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের অস্ত্র ও রসদ পরিবহন করত। রাজাকাররা সব সময়ই এই ব্রিজটির পাহারায় থাকত। জগৎজ্যোতি দাসকে ব্রিজটি ধ্বংস করার দায়িত্ব দেয়া হয়। জুলাইয়ের শেষের দিকে জগৎজ্যোতি তার গেরিলা বাহিনী নিয়ে ব্রিজটি উড়িয়ে দেয়ার জন্য রওনা দেন। পথে তিনি একদল রাজাকারের মুখোমুখি হন। রাজাকারদের এই অবস্থানের তথ্য জগৎজ্যোতির জানা ছিল না। রাজাকার দলের সঙ্গে যুদ্ধ বেধে গেলে ব্রিজে অবস্থানরত রাজাকাররা সতর্ক হয়ে যায়। জগৎজ্যোতি তার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনেন এবং জয়কলস ব্রিজের বদলে সদরপুর ব্রিজ উড়িয়ে দেয়ার জন্য রওনা হন। তার বাহিনী কোনো গুলি ব্যয় না করেই সদরপুর ব্রিজে পাহারারত রাজাকারদের বন্দি করে এবং বিস্ফোরক দিয়ে সদরপুর ব্রিজ উড়িয়ে দেয়। ১৬ নভেম্বর জগৎজ্যোতির দল বদলপুর অপারেশনে আজমিরীগঞ্জ, মারকুলি, গুঙ্গিয়ারগাঁও প্রভৃতি অঞ্চলে পাকিস্তানিদের শত্রæ ঘাঁটি ধ্বংস করে দেয়। তাদের প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি সেনারা হেলিকপ্টারও ব্যবহার করে। সম্মুখযুদ্ধের একপর্যায়ে জগৎজ্যোতির চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে পানিতে নিশ্চল হয়ে ঢলে পড়েন। পরে তার মৃতদেহ কুশিয়ারা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশের প্রথম সরকার তাকে সর্বোচ্চ বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর সে প্রতিশ্রæতি থেকে অজ্ঞাত কারণে ফিরে আসে বাংলাদেশ সরকার। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার জগৎজ্যোতিকে বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করে। [সংগৃহীত]