‘তিন গভর্নরের আমলে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তাতে কয়েকটি বিষয় সামনে এসেছে। তথ্য মতে, দেশের ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে গত ১৫ বছর তিন গভর্নর দায়িত্ব পালন করেছেন। এই তিন গভর্নরের আমলে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ বেড়েছে, যার পরিমাণ এক লাখ ২৩ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। তিন গভর্নর হলেন ড. আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার (বর্তমানে দায়িত্বরত)। খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেখে গভর্নরের যোগ্যতা ও দায়িত্বশীলতা নির্ণয়ের সুযোগ নেই। এটি যোগ্যতার মানদণ্ডও নয়। দুই পূর্বসুরির চেয়ে বর্তমান গভর্নরের ওপর দায়িত্ব নিয়েই কথা বেশি উঠবে। কেননা তিনি চেয়ারে আছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দিয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অস্থিতিশীল ডলার বাজার স্থিতিশীল এবং ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমানোসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। যদিও দায়িত্ব নেয়ার পর পৌনে দুই বছরে তেমন কোনো বিষয়ে অগ্রগতি দেখাতে পারেননি তিনি। বরং এ সময় ডলারের বাজার উল্টো অস্থিতিশীল হয়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ও সার্বিক মূল্যস্ফীতি রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছায়।
কয়েক বছর ধরে ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম খেলাপি ঋণ। দীর্ঘদিন ধরে সুশাসন না থাকায় খেলাপি ঋণের সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির তালিকায় বর্তমান গভর্নরের নাম জড়িয়ে আছে; এটি তার জন্য নিশ্চয়ই অস্বস্তির। তিনি নিজের মতো করে করণীয় নির্ধারণ করে থাকবেন। আমরা মনে করি, তার প্রথম দায়িত্ব হবে খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনি সীমাবদ্ধতাগুলো চিহ্নিত করা। বিশ্লেষকরা তো বটেই, সাধারণ মানুষ জানেন, ‘প্রভাবশালীরা মূলত সময়মতো ঋণ ফেরত দিচ্ছেন না। যে কারণে মামলা করেও কোনো ফল পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে ব্যাংকগুলো ঋণ পুনঃতফসিল, সুদ মওকুফ ও পুনর্গঠন করছে। এসব করেই বেশ কিছু ব্যাংক মুনাফাও দেখাচ্ছে।
ঋণ পেতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল যেসব শর্ত দিয়েছে, তার মধ্যে আছে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠন, ঋণখেলাপির সংজ্ঞায় পরিবর্তন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রায় ২১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে আনা ইত্যাদি।
ভিয়েতনাম, চীন, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো অনেক দেশ আইনের শক্ত প্রয়োগের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ অনেক কমিয়ে এনেছে। কেন সেটা আমরা পারছি না? এর সম্ভাব্য প্রধান করাণ, আমাদের দেশে আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে ব্যাংকিং খাতে খেলাপিদের বিরুদ্ধে কখনোই খুব কঠোর ব্যবস্থা তো নেয়া হয়নি, বরং তারা বরাবর নানা রকমের সুবিধা পেয়েছেন। যে কারণই থাকুক না কেন, মূল দায় নিতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকেই। অনিয়মে ঋণ বিতরণের সীমা টেনে দেয়া, নতুন শাখা খোলা বন্ধ, পরিচালনা পর্যদ ভেঙে দেয়া বা পরিচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মতো ক্ষমতা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। সে অর্থে আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্ষমতা প্রয়োগ করছে না। এমন অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে না পারলে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে ব্যাখ্যা দেয়া দরকার।