রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক সরদার ফজলুল করিমের ৯৯তম জš§দিন আজ। তিনি ছিলেন সাম্যবাদী চিন্তায় মানুষ। সরদার ফজলুল করিম ১৯২৫ সালের ১ মে বরিশালের আটপাড়া গ্রামে কৃষক পরিবারে জš§গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৪২ সালে আইএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৫ সালে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স এবং ১৯৪৬ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। রাজনীতির কারণে তিনি লন্ডনের স্কলারশিপ প্রত্যাখ্যান করেন।
সরদার ফজলুল করিম ১৯৪৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৮ সালে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার জন্য বিভিন্ন সময় তিনি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ১১ বছর কারাভোগ করেন। জেলে থাকা অবস্থাতেই ১৯৫৪ সালে তিনি পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমির অনুবাদ শাখায় যোগ দেন।
১৯৭১ সালে তিনি বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি শাখার বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন। সরদার ফজলুল করিম ছাত্রজীবনে বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে অনিশ্চিত জীবন বেছে নিয়েছিলেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তাবও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
রাজনীতির কারণে তিনি দীর্ঘ সময় কাপাসিয়া, মনোহরদী, চরসিন্ধুর প্রভৃতি গ্রামে আত্মগোপন করে ছিলেন। তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকবর্গ জাতীয় পরিষদের সদস্য থাকা অবস্থাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে। রাজনৈতিক কারণে তাকে দীর্ঘদিন কারাগারে কাটাতে হয়।
সরদার ফজলুল করিম রচিত ও অনূদিত গ্রন্থের মধ্যে প্লেটোর সংলাপ, প্লেটোর রিপাবলিক, অ্যারিস্টটলের পলিটিক্স, রুশোর সোশ্যাল কনট্রাকট, পাঠপ্রসঙ্গ, চল্লিশের দশকের ঢাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ, সেই সে কাল, কিছু স্মৃতি কিছু কথা, নানা কথা, নানা কথার পরের কথা এবং নূহের কিসমত প্রভৃতি। এছাড়া ‘দর্শনকোষ’ নামে দর্শনের একটি অভিধান লিখেছেন তিনি।
সরদার ফজলুল করিম বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ছাড়াও নানা সম্মাননা ও পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৪ সালের ১৪ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [সংগৃহীত]