ডিএসইর উদ্যোগে ফাইন্যান্সিয়াল ডেরিভেটিভ বিষয়ে কর্মশালা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃক আয়োজিত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সিডিবিএল, সিসিবিএল, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীদের অংশগ্রহণে গাজীপুরের ব্র্যাক সিডিএমে দুদিনব্যাপী ফাইন্যান্সিয়াল ডেরিভেটিভস অন এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড প্ল্যাটফর্ম শীর্ষক কর্মশালা গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসইসির কমিশনার মো. আব্দুল হালিম এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিবিএর প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ডিএসই’র মার্কেট ডেভেলপমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. ছামিউল ইসলামের সঞ্চালনায় দুদিনব্যাপী কর্মশালার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ডিএসইও তার পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ আনতে আগ্রহী। আমরা বিধি প্রণয়নের জন্য বিএসইসির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি এবং খুব শিগগিরই ডেরিভেটিভ মার্কেট শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছি।

কর্মশালার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা যখন কাজ শুরু করি তখন আমাদের এই মার্কেট খুবই ছোট ছিল। সে সময় আন্তর্জাতিক অনেক বড় মার্কেট দেখার সুযোগ হয় তার তুলনায় এই মার্কেট কিছুই ছিল না। তখন ভাবতাম এবং আশা করতাম যে আমাদের পুঁজিবাজার বড় হবে। কিন্তু এখনও বড় হয়নি। বাজার এখনও শিশু অবস্থায় রয়ে গেছে। মার্কেট এ অবস্থা হওয়ার কারণ হচ্ছে, আমাদের মার্কেটে পণ্য কম, ইকুইটিকেন্দ্রিক বাজার। এখানে বিনিয়োগের নতুন কোনো ক্ষেত্র নেই এবং নতুন কোনো পণ্য নেই। ফলে দেশে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ে। এখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মিলে ডেরিভেটিভস পণ্য চালুর উদ্যোগ নিয়েছে; তারই অংশ হিসেবে এই ট্রেনিং প্রোগ্রাম। আমরা এ কর্মশালার মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারব; যা এই পণ্য চালুকরণে টেকনিক্যাল ও অবকাঠামো তৈরিতে কাজ করবে।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসইর উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া। মূল প্রবন্ধে তিনি ডেরিভেটিবসের প্রকারভেদ, ডেরিভেটিভ মার্কেটের তাৎপর্য ও প্রভাব, বিশ্বব্যাপী ডেরিভেটিভস মার্কেট বৃদ্ধির কারণ, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ডেরিভেটিভসের বৈশিষ্ট্য, ডেরিভেটিভস মার্কেটে সেটেলমেন্টের ধরন, ফরোয়ার্ড এবং ফিউচারের মধ্যে পার্থক্য, ফরোয়ার্ড কনট্রাক্টের সীমাবদ্ধতা, ফিউচার কনট্রাক্টের সীমাবদ্ধতা, ফিউচার ট্রেডিংয়ের বিভিন্ন টার্মিনলজি, ফিউচার কন্ট্রাক্টের স্পেসিফিকেশন, ফিউচার ও অপশনের মধ্যে পার্থক্য, অপশনস ট্রেডিংয়ের বিভিন্ন টার্মিনোলজি, অপশন ট্রেডিংয়ের সুবিধা, অপশনের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি, অপশন কন্ট্রান্টের স্পেসিফিকেশন, অপশন ট্রেডিংয়ের কৌশল, ডেরিভেটিভস ব্যবহার, হেজিং ও এর প্রকারভেদ, মৌলিক ঝুঁকি, ক্রস হেজ ও এর সঙ্গে যুক্ত ঝুঁকি, হেজিংয়ের সীমাবদ্ধতা, এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মে ফিউচারস অ্যান্ড অপশনস ট্রেডিংয়ে জড়িত পক্ষসমূহ, ডেরিভেটিভস ট্রেডিং প্রক্রিয়া, ফিউচার ও অপশনের জন্য স্টক ও সূচক নির্বাচনের মানদণ্ড, বিভিন্ন ধরনের করপোরেট অ্যাকশন ব্যবস্থাপনা, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট, মার্জিন ম্যানেজমেন্ট, ইনিশিয়াল মার্জিন, মেইনটেন্যান্স মার্জিন ও মার্জিন কল, মার্জিনের পেমেন্ট, বিভিন্ন ধরনের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট, সেটেলমেন্টের প্রক্রিয়া এবং সর্বোপরি এক্সচেঞ্জ ডেরিভেটিভস চালুকরণে পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে আলোকপাত করেন।

নাসডাক মার্কেটপ্লেস টেকনোলজির হেড অব ট্রেডিং কার্ল সেøজার প্রযুক্তি কীভাবে ডেরিভেটিভস ট্রেডিং এবং ব্যবসায়িক সুবিধা নিয়ে আসে এবং ডেরিভেটিভস ট্রেডিংয়ের বাজার ব্যবস্থা এবং অনুশীলন সম্পর্কে আলোকপাত করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম ফিউচারস ও অপশনস বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় অপশনসের ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজিং, রিটার্ন বৃদ্ধির কৌশল, কভার্ড কল, ভ্যালু প্রটেকশন স্ট্র্যাটেজি, বুল, বিয়ার ও বাটারফ্লাই ট্রেড, লং ও শর্ট স্ট্রাংগেল, অপশন প্রাইসিং মেথডস, ব্ল্যাক-সোলস মডেল, বায়নোমিয়াল ট্রি মডেল, কন্ট্রোল ভ্যারিয়েট টেকনিক, ফিউচার প্রাইসিং, ফিউচার কন্ট্রাকটস, প্রাইসিং ফরোয়ার্ড, স্টক ইনডেক্স, ইনডেক্স আরবিট্রেজ, প্রাইসিং ফরোয়ার্ড বনাম ফিউচারস, লং অ্যান্ড শর্ট পজিশনস, হেজিং প্রিন্সিপাল, শর্ট অ্যান্ড লং হেজ, পারফেক্ট হেজ, বেসিস অ্যান্ড বেসিস রিক্স, হেজ ফরোয়ার্ড বনাম ফিউচারস ও অপটিমাল হেজ রেশিওয়ের ওপর আলোকপাত করেন।

কর্মশালার বিশেষ অতিথি ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম টেকসই পণ্য বৈচিত্র্যকরণে ফাইন্যান্সিয়াল ডেরিভেটিভসের ভূমিকা বিষয়ে বলেন, দেশের পুঁজিবাজারে পণ্যের ভিন্নতা আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো পিছিয়ে রয়েছে। তবে আজকের এ আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে ধন্যবাদ জানাই। এ বিষয়ে ডিএসইকেই এগিয়ে আসতে হবে।

ফাইন্যান্সিয়াল ডেরিভেটিভসের ক্ষেত্রে বিএসইসির ভূমিকা বিষয়ে কর্মশালার প্রধান অতিথি বিএসইসির কমিশনার মো. আব্দুল হালিম বলেন, ডেরিভেটিবস নিয়ে আজকের ওয়ার্কশপই শেষ নয়। এটা নিয়ে আরও অনেক প্রোগ্রাম করতে হবে। বিশ্বের অনেকে দেশে এ বিষয়ে অনেক আগে থেকে চালু আছে। তাই যারা এ বিষয় নিয়ে কাজ করবেন তারা প্রয়োজনে সেসব দেশ থেকে শিক্ষা নিয়ে আসতে হবে। শুধুই ইকুইটি দিয়ে মার্কেট বড় হবে না। মার্কেট বড় করতে আরও বিভিন্ন ধরনের পণ্য দরকার।

পরে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম, ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাফিজ আল তারিক, ডিএসইর উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া প্রমুখ।

পরিশেষে ডিএসইর প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা সাত্বিক আহমেদ শাহ সমাপনী বক্তব্যে বলেন, সময়ের পরিবর্তনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সকল ক্ষেত্রেই পরিবর্ধিত ও পরিবর্তিত হচ্ছে। এ পরিবর্তনের অংশ হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে পণ্য বৈচিত্র্যকরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে পণ্য বৈচিত্র্যময় করার জন্য এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ পোর্টফোলিও গঠনের জন্য এই মুহূর্তে ডেরিভেটিভস মার্কেটের বিকল্প নেই। আজকের এ কর্মশালা আয়োজন করার প্রধান উদ্দেশ্য আর্থিক ডেরিভেটিভস সম্পর্কে জ্ঞান ভাগাভাগি করা এবং এই কর্মশালা থেকে আর্থিক ডেরিভেটিভস সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে পারা।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০