গাইবান্ধায় সোনালি ভুট্টায় কৃষকের হাসি

 

প্রতিনিধি, গাইবান্ধা: উত্তরের জেলা গাইবান্ধার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট, করতোয়া ও কাটাখালী নদীর চরাঞ্চলগুলোয় মাঠের পর মাঠ চাষ হয়েছে ভুট্টা। সবুজ আর বাদামি রঙের গাছগুলো দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। গাছে গাছে ঝুলে আছে সোনালি রঙের ভুট্টার ছড়ি। অনেক গাছ থেকে ছড়ি কেটে নেয়া হয়েছে। আবার অনেক গাছে কাটার কাজ চলছে। গাইবান্ধার ১৬৫ চর-দ্বীপচর আর নদ-নদী পারের প্রায় প্রতিটি কৃষকের বাড়িতেই এখন ভুট্টা আর ভুট্টা। কেউ মাড়াই করছেন, আবার কেউ পরিষ্কার করছেন, কেউ আবার রোদে শুকাচ্ছেন। রোদে ভুট্টার সোনালি হাসিতে হাসছে কৃষক। বাড়িতে ভুট্টা আসার পর পুরুষের সহযোগিতায় নারী-শিশুরাও কাজ করছেন।

চরের মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী বলেই ভাগ্যের চাকা ঘুরছে এখানকার চাষিদের। ভুট্টার ফলনে কৃষকের চোখে এখন সোনালি স্বপ্ন, মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি। এখন ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব না পড়লে ভুট্টার ভালো দাম পাবেন বলে বিশ্বাস তাদের।

কৃষিবিদরা বলছেন, ভুট্টা চাষে চরাঞ্চলের প্রান্তিক চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এখন চরের কোনো জমি আর পতিত নেই। যেসব চাষির নিজস্ব জমি নেই, তারাও অন্যের জমি লিজ নিয়ে ভুট্টা চাষ করে সচ্ছলভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। ভুট্টা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। তাই চাষিরা অধিক লাভের আশায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন এবং লাভবান হওয়ায় এ অঞ্চলে দিন দিন ভুট্টা চাষে আগ্রহও বাড়ছে। তাই গত বছরের চেয়ে এ বছর ব্যাপক হারে চাষিরা ভুট্টার চাষ করেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর গাইবান্ধা জেলায় ১৭ হাজার ৭৬১ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ ভাগই চাষ হয়েছে চরাঞ্চলের জমিতে। গত বছর জেলায় ভুট্টা চাষ হয়েছিল ১৭ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর চাষের পরিধি বেড়ে ৭১৬ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় এ অঞ্চলে ভুট্টার আবাদ দিন দিন বাড়ছে।

ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার কয়েকটি চরগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চরের বালিমাটিতে এবার ভুট্টার ফলন বেশ ভালো হয়েছে। চাষিরা ভুট্টার মোচা সংগ্রহ করে ঘরে তুলছেন। কেউ সংগ্রহ করা ভুট্টার কলাগুলো থেকে ভুট্টা বের করছেন। বাজারজাতকরণে নেই কোনো বিড়ম্বনা। পাইকাররা বাড়ি এসে ৯৫০ থেকে এক হাজার ৫০ টাকা মণ (৪০ কেজি) দরে ভুট্টা সংগ্রহ করছেন।

সদর উপজেলার কামারজানির কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি চার বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। এক বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করতে প্রায় দুই হাজার টাকার বীজ লাগে। জমি চাষ, সেচ ও সার-কীটনাশক, আগাছা পরিষ্কার, ভুট্টা কাটা, বাড়িতে নিয়ে আসা, মাড়াই ও বিক্রি উপযোগী করার শ্রমিক বাবদ খরচ সব মিলিয়ে তার প্রতি বিঘায় ভুট্টা চাষ করতে খরচ হয়েছে আট থেকে ১০ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মণ ভুট্টা পেয়েছেন। এতে খরচ বাদে ২৭-৩০ হাজার টাকা বিঘাপ্রতি পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।

ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষক তমিজ আলী ১৩ বিঘা জমিতে গত ডিসেম্বর মাসে ভুট্টার বীজ বপন করেছেন। নিজের জমির পাশাপাশি অন্যের জমি চুক্তি নিয়েও ভুট্টা চাষ করেছেন তিনি। চার মাসের ফসল ভুট্টা মার্চ-এপ্রিলের মধ্যেই ঘরে চলে এসেছে। পরিবারের সবাই মিলে এই চাষে যুক্ত। এ বছর ভুট্টার চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। তবে দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, কৃষি ফসল হিসেবে ভুট্টা খুবই লাভজনক। চরাঞ্চলে এই ফসলের চাষ দিন দিন বাড়ছে। এই চাষে তিন হাজার ৮০০ কৃষককে সরকারিভাবে প্রণোদনা ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে আছেন।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০