ভারতের পেঁয়াজ আমদানি বন্ধে দাম বেড়েছিল, চালুর খবরে সামান্য কমেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর বাংলাদেশে অধিক হারে দাম বাড়ে। কিন্তু এখন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলেও খুব বেশি প্রভাব নেই ভোক্তা পর্যায়ে। ঢাকার খুচরা বাজারগুলোয় এখনও পণ্যটির দাম কমেনি।

তবে পাইকারি বাজার ও গ্রামগঞ্জের মোকামে পেঁয়াজের দাম কিছুটা নিম্নমুখী। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি দুই টাকা কমতে দেখা গেছে গতকাল রোববার।

এছাড়া রাজধানীর সবচেয়ে বড় আড়ত শ্যামবাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা এবং পাবনার মোকামগুলোয় পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আবার ফরিদপুরে প্রতি কেজিতে দাম কমেছে গড়ে ৫ টাকা।

প্রায় ছয় মাস পর গতকাল শনিবার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এক বিজ্ঞপ্তিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার তথ্য জানায়। তবে ডিজিএফটি পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য (মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস-এমইপি) নির্ধারণ করেছে ৫৫০ ডলার।

বাংলাদেশের আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতে পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই দামের কারণে পেঁয়াজ আমদানি করে সুবিধা করা যাবে না। কারণ ৫৫০ ডলারে পেঁয়াজ আমদানি করলে দেশের বাজারে প্রতি কেজির দাম হবে ৮০ টাকার কাছাকাছি, যা বাজারের বর্তমান দামের চেয়ে বেশি।

শ্যামবাজারের পেঁয়াজ আমদানিকারক আব্দুল মাজেদ বলেন, প্রতি টন পেঁয়াজ ৫৫০ ডলার হলে, ডলার রেটে প্রতি কেজির দাম হয় ৬২ টাকা। এরপর ৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ এআই দিতে হবে। এছাড়া পরিবহন ও অন্য খরচ মিলে বাজারে আনতে এ পেঁয়াজ হবে ৮০ টাকা।

এ কারণে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার আমাদের কোনো কাজে আসবে না।

তবে ভারত যদি এমইপি কমায় তখন সুবিধা হবে। তবে তিনি এও বলেন, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বাড়বে না এখন। কারণ, দাম ৮০ টাকার ওপরে গেলেই আমদানি করা যাবে।

এদিকে রোববার কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩২০ টাকা পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা শনিবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আগে ছিল ৩৩০ টাকা। ওই বাজারের বিক্রেতা খালেক উদ্দিন বলেন, আজ (রোববার) পাল্লায় ১০ টাকা কমেছে। প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবে ১০-২০ টাকা ওঠানামা করে।

তিনি বলেন, তবে শুনেছি মোকামে দাম আরও কিছুটা কমেছে। সেগুলো কাল-পরশু বাজারে এলে দাম আরও কিছুটা কমবে।

অন্যদিকে শ্যামবাজারে পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা কমেছে বলে জানিয়েছেন আব্দুল মাজেদ। তিনি বলেন, গতদিনের ব্যবধানে আজ পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

যদিও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেনি। সেগুনবাগিচা ও শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শনিবারও এ দামেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।

কুমিল্লা এন্টারপ্রাইজের নূর হোসেন বলেন, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার পর এখনও পেঁয়াজ কেনা হয়নি। আগের দামেই সবাই বিক্রি করছে।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধুলাউড়ি হাটে রোববার প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়, যা শনিবার সকালেও ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা ছিল। ধুলাউড়ি হাটের আড়তদার বায়েজীদ আলী বলেন, ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কারণে পেঁয়াজের দাম কমছে।

সুজানগর হাটের আড়তদার আমিরুল বলেন, শনিবার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর ২০০ টাকা, রোববার আরও ২০০ টাকা কমেছে। অর্থাৎ এ পর্যন্ত মণপ্রতি ৪০০ টাকা কমেছে।

তবে পেঁয়াজের দাম কমায় কৃষকরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। সাঁথিয়ার কুমিরগাড়ী গ্রামের চাষি মহসিন আলী বলেন, পেঁয়াজের যখনই একটু ভালো দাম পেতে যাই তখনই সেটা বাইরে থেকে আমদানি করে দাম কমিয়ে দেয়া হয়। এবারও তাই করা হবে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আসবে এমন বলে মোকামে আড়তদাররা দাম কমিয়ে দিয়েছেন।

এদিকে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার সালথা গ্রামের কৃষক আপস বিশ্বাস গতকাল বলেন, গত হাটে এক মণ পেঁয়াজ ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। আজ ১ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি করেছি। তিন-চার দিনের ব্যবধানে প্রায় ৪০০ টাকা কমেছে। এতে আমাদের লোকসান হচ্ছে। প্রতি মণ পেঁয়াজ ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করলে আমাদের চালান বা পুঁজি উঠত।

অন্যদিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. আতিয়ার রহমান বলেন, প্রতি মণ পেঁয়াজ ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে পাইকারি বাজারে এ দাম চলছে।

মধুখালী উপজেলা সদরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. আলম শেখ বলেন, গত শুক্রবার মধুখালীতে পাইকারি বাজারে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৩৫০ টাকায় প্রতি মণ পেঁয়াজ ক্রয় করেছি। দু’দিন পর রোববার সেই পেঁয়াজ ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ গত দু’দিনে প্রতি মণ পেঁয়াজ গড়ে দেড় থেকে দুইশ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০