অটোরিকশা ও ট্যাক্সির চেয়ে উবারে বেশি ভাড়া নয়

ইসমাইল আলী: ঢাকায় দ্রুত বাড়ছে অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সিসেবা উবারের ব্যবহার। বর্তমানে পাঁচ হাজারের বেশি ব্যক্তিগত গাড়ি চলছে উবারের অধীনে। তবে এটি নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এজন্য রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। তবে এর খসড়ায় ভাড়া নিয়ন্ত্রণের কোনো বিধান রাখা হয়নি, যদিও উবারের ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ অনেক। এজন্য ভাড়ায় নিয়ন্ত্রণ আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে।

গত সপ্তাহে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, রাইড শেয়ারিং সার্ভিস তথা উবারের ভাড়া সিএনজি অটোরিকশা ও ট্যাক্সিক্যাবের চেয়ে বেশি হতে পারবে না।

বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি), সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), হাইওয়ে পুলিশ রেঞ্জ এবং ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে বলা হয়, বিদ্যমান সিএনজি অটোরিকশা নীতিমালা ও ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইনের সঙ্গে যেন রাইড শেয়ারিং নীতিমালা সাংঘর্ষিক না হয়। তাই ভাড়ায় চালিত ট্যাক্সি ও অটোরিকশা এর আওতায় চলাচল করতে পারবে না। তবে রাইড শেয়ারিংয়ে ব্যক্তিগত মোটরকার, জিপ, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট সিএনজি ও অ্যাম্বুলেন্স অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট সিএনজি মহাসড়কে চলাচল করতে পারবে না।

এতে আরও বলা হয়, বিদ্যমান সিএনজি সার্ভিস নীতিমালা-২০০৭ ও ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন ২০১০-এর জন্য নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের ভাড়া বেশি হতে পারবে না।

উল্লেখ্য, বতর্মানে উবারে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ টাকা। আর ভিত্তিভাড়া হবে ৪০ টাকা। তবে যাত্রাপথের সময়ের জন্য প্রতি মিনিটের চার্জ তিন টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এতে বনানী ১১নং সড়ক থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ভাড়া পড়বে ৩৭০ টাকা। এ পথের দূরত্ব ১০ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার।

এদিকে ট্যাক্সিতে এ ভাড়া পড়বে কমপক্ষে ৪০০ টাকা। কারণ ট্যাক্সির ক্ষেত্রে প্রথম দুই কিলোমিটারের জন্য রাখা হয় ৮৫ টাকা। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৩৪ টাকা। আর প্রতি দুই মিনিট অপেক্ষমাণ সময়ের (যানজট, যাত্রাবিরতি ও সংকেত) জন্য সাড়ে আট টাকা। আর অটোরিকশায় এ পথের ভাড়া পড়বে ১৬০ টাকা। কারণ প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া অটোরিকশায় ৪০ টাকা। আর পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা। এছাড়া বিরতিকালের জন্য প্রতি মিনিট দুই টাকা হার নির্ধারিত। তবে ঢাকা শহরে অটোরিকশায় কখনোই মিটারে যাতায়াত করা যায় না, যদিও অটোরিকশার তুলনায় কম ভাড়াকে সমর্থন করছেন না অনেকে। তাদের মতে, রাইড শেয়ারিংয়ে ব্যক্তিগত গাড়ির আবহে যাতায়াত করা যায়। এছাড়া এসি গাড়ি হওয়ায় অনেক উন্নত মানের সেবা পাওয়া যায়, যা অটোরিকশায় সম্ভব নয়। এছাড়া ভাড়া নিয়ে অটোরিকশার মতো বাগবিতণ্ডার কোনো সুযোগ নেই। তাই অটোরিকশার চেয়ে উবার তথা রাইড শেয়ারিংয়ের ভাড়া বেশি হওয়া উচিত।

জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক শেয়ার বিজকে বলেন, রাইড শেয়ারিং সার্ভিসটি এখন অবৈধভাবে চলছে। তাই আপাতত এ সেবাটিকে বৈধতা দিতে নীতিমালা প্রণয়নে জোর দেওয়া হচ্ছে। তাই ভাড়া প্রাথমিকভাবে ডি-রেগুলেটেড থাকবে। তবে প্রয়োজন হলে সরকার ট্যাক্সি ও অটোরিকশার মতো ভাড়ার হার নির্ধারণ করে দেবে। যদিও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন শহরের চেয়ে ঢাকায় উবারের ভাড়ার হার বেশি।

তথ্যমতে, কলকাতায় বেজ ফেয়ার কিছুটা বেশি, ৪৭ দশমিক ৭০ রুপি, দেশীয় মুদ্রায় যা ৫৮ টাকা ৫০ পয়সা। তবে যাত্রাপথের প্রতি মিনিটের জন্য যাত্রীদের গুনতে হয় এক দশমিক ৬০ রুপি (এক টাকা ৯৬ পয়সা)। আর প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৯ দশমিক ছয় রুপি বা ১১ টাকা ৭৮ পয়সা। শুধু কলকাতা নয়, ভারতের দিল্লি, আহমেদাবাদ ও মুম্বাইতেও উবারের ভাড়া ঢাকার তুলনায় কম। তবে সবচেয়ে কম ভাড়া ব্যাঙ্গালুরুতে। শহরটিতে ভিত্তিভাড়াও ঢাকার চেয়েও কম। এছাড়া পাকিস্তানের ইসলামাবাদ ও ফয়সালাবাদেও উবারের ভাড়া ঢাকার তুলনায় অনেক কম। এক্ষেত্রে ভিত্তিভাড়া, দূরত্ব ও সময়Ñতিন ক্ষেত্রেই চার্জ ঢাকার চেয়ে অনেক কম। এদিকে পার্শ^বর্তী দেশ মিয়ানমারের সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গুনেও উবারের ভাড়া ঢাকার চেয়ে কম।

উল্লেখ্য, রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালার খসড়াতে মতামত আহবান করা হলেও ভাড়ায় নিয়ন্ত্রণ আরোপের সুপারিশই ছিল বেশি। এর বাইরে ১৭টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা ও অধিদফতরকে লিখিত মতামত প্রেরণে অনুরোধ করা হয়। এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, পুলিশ, ডিটিসিএ, বিআরটিএ ও বিআরটিসি থেকে খসড়া সম্পর্কে ঐকমত্য পোষণ করে মতামত জ্ঞাপন করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা মহানগর সিএনজি মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদ, উবার, ওবি (রাইড শেয়ারিং সেবা প্রদানকারী) লিখিত মতামত প্রদান করে।

বৈঠকে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসটি বিশেষ ধরনের সেবা হওয়ায় প্রস্তাবিত এনলিস্টমেন্ট ফি বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের মতামত নিতে হবে। রাইড শেয়ারিং সংক্রান্ত কোনো তথ্য ও উপাত্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা বিআরটিএ বা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কোনো প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ বা সরবরাহ করতে পারবে না। রাইড শেয়ারিং সার্ভিস যাত্রীর তথ্য বা সার্ভিস পরিচালনা-সংক্রান্ত তথ্য শুধু বাংলাদেশে সংরক্ষণ করবে।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০