রণদা প্রসাদ সাহা সমাজসেবক ও শিল্পানুরাগী। আর পি সাহা নামেই তিনি অধিক পরিচিত। ১৮৯৬ সালের ১৫ নভেম্বর সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের কাছৈড় গ্রামে মাতুলালয়ে তার জন্ম। পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ পোদ্দার এবং মাতার নাম কুমুদিনী দেবী। রণদা মাত্র সাত বছর বয়সে মাতৃহারা হন। তৃতীয় শ্রেণির পর রণদার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। কিশোর রণদা বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা যান এবং তিনি বিভিন্ন ধরনের কায়িক শ্রম যেমন-কুলি, শ্রমিক, রিকশা চালক, ফেরিওয়ালার প্রভৃতির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। রণদা প্রসাদ চাকরি শুরু করেছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রে অসুস্থ ও আহতদের সেবা প্রদানের মাধ্যমে। একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে রূপান্তরিত হওয়ার পরও তিনি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেবা প্রদান অব্যাহত রাখেন। ১৯৩৮ সালে মির্জাপুরে তিনি তার মায়ের নামে কুমুদিনী হাসপাতালের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং একই সময়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগ হিসেবে তার ঠাকুরমার নামে ‘শোভাসুন্দরী ডিসপেন্সারি’ চালু করেন। ১৯৪৩ সালে কুমুদিনী হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৪৪ সালের ২৭ জুলাই বাংলার গভর্নর লর্ড আর জি কেসি ২০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। বর্তমানে এই হাসপাতাল থেকে গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ১২ হাজারের অধিক মানুষ চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে।
রণদা শৌখীন অভিনেতা হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। সৈনিক অবস্থায় করাচিতে তার নাট্য জীবন শুরু। ১৯৬৯ সালে ‘আলমগীর’ নাটকের মূল চরিত্রে অভিনয় করে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। ব্রিটিশ সরকারকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সহযোগিতা প্রদানের জন্য রণদা ১৯৪৪ সালে ‘রায় বাহাদুর’ খেতাব প্রাপ্ত হন। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সরকার সমাজ সেবার জন্য তাকে ‘হেলাল এ পাকিস্তান’ খেতাব প্রদান করে। ১৯৭৮ সালে রণদা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ খেতাব স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার পান। ১৯৮৪ সালে ‘কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ ও সমাজ সেবায় অসামান্য অবদানের জন্য ‘স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার’ লাভ করে। বাংলাদেশ সরকারের ডাক বিভাগ ১৯৯১ সালে রণদা প্রসাদের স্বরণে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। ১৯৭১ সালের ৭ মে পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী সহযোগীরা মির্জাপুর থেকে রণদা প্রসাদ সাহা ও তার পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহাকে ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। [সংগৃহীত]