নির্বাচনী ব্যবস্থা ‘ধ্বংস’ বলেই ভোটারের ‘আকাল’: হাফিজ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা ‘ধ্বংসপ্রাপ্ত’ দাবি করে বিএনপি নেতা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এজন্যই উপজেলা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোয় ভোটারের ‘আকাল’ দেখা দিয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাস পর প্রথম ধাপে ১৩৯টি পৌরসভায় ভোট চলাকালে গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।

সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে এই আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাঙালিরা ১৯৩৭ সাল থেকে ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচিত করে এসেছে। আজকে দেশে গণতন্ত্র নির্বাসনে ভোট ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে।

‘আজকে দেশে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে। টেলিভিশনগুলোয় দেখাচ্ছে কেন্দ্রগুলো ‘খাঁ-খাঁ’ করছে, কোনো ভোটার সেখানে যায়নি।’

কেন এই অবস্থা হলোÑএ প্রশ্ন রেখে হাফিজ বলেন, ‘কেন মানুষ ভোট দিতে পারে না? কেন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ‘বিলুপ্ত’ হলো? কেন দেশে আইনের শাসন নেই? কেন মানুষের মৌলিক অধিকার নেই। কারণ ভোট ব্যবস্থাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার স্মরণে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা’।

হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘যে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, কোথায় গেল সেই সামাজিক মূল্যবোধ? বর্তমান বাংলাদেশ ক্ষমতাসীন সরকারের দুঃশাসনের কারণে মানবিক মর্যাদা-সাম্য, সামাজিক সুবিচার ‘বিলুপ্ত হয়ে গেছে’ বাংলাদেশ থেকে।’

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো মানুষদের আবার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখ লাগে এই লোককে আমরা ভুলে যেতে বসেছি, তরুণ সমাজ হয়তো তার নামও জানে না।

‘অথচ আজকে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ যদি একজন রোল মডেল খুঁজে বের করে, সেটি হবেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এই ‘দারিদ্র্য সন্ত্রাসকবলিত, দুর্নীতিগ্রস্ত’ রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণতন্ত্রে উত্তরণ হতে পারে যদি আজকে দেশে এ রকম আরও শত শত জাফরুল্লাহ সৃষ্টি হয়।

‘যেহেতু দেশে আমাদের সমাজ আর জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো ব্যক্তিদের ধারণ করতে পারে না, যে কারণে আজকে বাংলাদেশের এই দুর্দশা।’

ছাত্র ও তরুণদের সামনে কোনো রোল মডেল আছেÑএ প্রশ্ন রেখে হাফিজ বলেন, ‘নেই। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পরে একজন ঔপন্যাসিক বাংলাদেশে আছেন? নেই।

‘একজন ভালো কবির নাম আপনারা বলতে পারবেন? সাহিত্যিকের নাম বলতে পারবেন? নেই। বাংলাদেশের সমাজ একটা মন্দা সমাজ, নষ্ট সমাজ। রাজনৈতিক অঙ্গন তো অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে।’

প্যালেস্টাইনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কোথায় আজকে আমাদের ছাত্রসমাজ, কোথায় আমাদের তরুণেরা, কোথাও কোনো প্রতিবাদ তো দেখি না।

‘খোদ আমেরিকায় প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আমরা মুসলমান বলে দাবি করি, অথচ আমাদের মধ্যে কোনো প্রতিবাদ দেখি না।’

বাংলাদেশের সব প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘গুম-খুন-দুর্নীতির ফলে আমরা একটা নির্জীব জাতিতে পরিণত হয়েছি। এখন আর একাত্তরের মতো অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দেখা যায় না।’

মুক্তিযুদ্ধের সময় তরুণদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে আফসোস করেন এই মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলেন, ‘আমি ৬০০ ছাত্রকে রিক্রুট করেছিলাম আমার ব্যাটালিয়নে। চার মাস তাদের নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম। এই ৬০০ সৈনিকের মধ্যে ১০০ জন রণাঙ্গনে জীবন দিয়েছে। দেশ তাদের কাছে কত প্রিয় ছিল!’

দেশ ও সাধারণ মানুষের চিন্তা আর ছাত্রসমাজের মধ্যে নেই বলে মনে করেন হাফিজ। বলেন, ‘সবাই আছে হালুয়া-রুটির লোভে আর রাজনৈতিক দলগুলো আছে শুধু ক্ষমতার চিন্তায়Ñকীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে, কিংবা কীভাবে ক্ষমতায় থাকা যাবে।

‘এখানে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্থান কোথায়, এখানে মুক্তিকামী তরুণদের স্থান কোথায়, যে জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি? মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের সেই যুদ্ধ কি ব্যর্থ হয়ে গেল?’

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নূরও বক্তব্য রাখেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সহধর্মিণী শিরিন হক ও ছেলে বারিশ চৌধুরীও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০