চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ নাকি অবাঞ্ছিত কোটা পদ্ধতি বাতিল, কোনটা অধিক গুরুত্বপূর্ণ

 

সাহীদ বিন আহমদঃসাম্প্রতিককালে প্রচুর আলাপ-আলোচনা হচ্ছে চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করার দাবি নিয়ে। ইন্ডিপেন্ডেট চ্যানেলের অনলাইন জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৯৬.৫৪% শিক্ষার্থী চায়, চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ হোক। তবে অনেকের মধ্যে এই বিষয়টা নিয়েও আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তাদের দাবিগুলোও যৌক্তিক। তারা বলছে, চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করলেই কি সবাই চাকরি পেয়ে যাবে বা বেকারত্ব দূর করা যাবে কিনা এই ব্যাপারে ভাবার অনেক সুযোগ রয়েছে। তারা আরও বলছে, তখন বেকারত্ব আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ বয়সসীমা বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থান কিন্তু সমানুপাতিক হারে বাড়ানো হচ্ছে না। আবার কেউ কেউ বলছেন, চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করলে সরকারি চাকরির বাজারের প্রতিযোগিতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। পড়াশোনা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে চাকরি পাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যাবে। চাকরিতে বয়সসীমা যদি ৩৫ করা হয় তখন দেখা যাবে, একজন ২৬-২৭ বছরের যুবক কোনো চাকরির জন্য নির্বাচিত হয়েও যান, তারপরও ওই প্রশাসন তাকে এই কথা বলে নিযুক্ত করতে চাইবে না যে আপনার বয়স তো এখনও অনেক বাকি আছে। আপাতত যাদের বয়স প্রায় শেষ পর্যায়ে তাদের এই চাকরিতে নিযুক্ত হওয়ার সুযোগটা দিয়ে দিন। এভাবেও দেখা যাচ্ছে যোগ্য ব্যক্তিকে ঠকানো হচ্ছে। আবার চাকরিতে বয়সসীমা যদি ৩৫ করাও হয়, তখন দেখা যাবে যতদিন না পর্যন্ত সরকারি চাকরি মিলছে, ততদিন পর্যন্ত চাকরির প্রস্তুতি ছাত্ররা নিতেই থাকবে। পরে যদি সে চাকরি না পায়, তখন সে আরও হতাশার সম্মুখীন হবে। এক্ষেত্রে সে চাকরির প্রস্তুতি অতদিন না নিয়ে নিজ উদ্যোগে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করলে অনেক ক্ষেত্রেই সফলতা আনয়ন সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে সরকারি চাকরি করলেই শান্তি বা জীবনে সফল হতে হলে বিসিএস হতে হবে বা ব্যাংকে চাকরি করতে হবে, এই সমস্ত সস্তা মোটিভেশন যারা দেয়, তাদের দমানো উচিত বলেও আমি মনে করি।

দেশে পড়াশোনা শেষ করতে করতে সাধারণত একজন যুবক-যুবতীর ২৬-২৭ বছর লেগে যায়। এক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনা, টিউশন সবকিছু ব্যবস্থা করে, বাড়তি চাকরির পড়া পড়ার সময় ও সুযোগ খুব কম থাকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগটা একটু বেশি। যদিও তাদেরও পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক সময় নিজের পরিবারকেও আর্থিকভাবে সাহায্য করতে হয়। এদিক দিয়ে বিবেচনা করলে চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো উচিত বলে বিবেচিত হতে পারে। তবে তা কোনোভাবেই ৩৫ না। তা ৩২ হতে পারে কিনা ভাবার সুযোগ রয়েছে।

এক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় আলাপ করা উচিত, সেটা হলো চাকরিতে অবাঞ্ছিত কোটা পদ্ধতি। আমার কাছে মনে হয়, এই অবাঞ্ছিত কোটা পদ্ধতি বাতিল করা সবার আগে জরুরি, যদি আমরা যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে দেশের কাঠামো গঠন করতে চাই। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের এক রিপোর্টে দেখা গেছে, বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে মোট কোটা ২৫৮ ধরনের। প্রথম শ্রেণির চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০%, প্রতিবন্ধী কোটা ১%, নারী কোটা ১০% এবং জেলা কোটা ১০%। আমার কাছে মনে হচ্ছে, সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানোর থেকে চাকরিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করা আরও জরুরি। এক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫% এবং নারী কোটা ৫%, প্রতিবন্ধী কোটা ১০% এবং জেলা কোটা ৫% অথবা কিছু ক্ষেত্রে জেলা কোটার ব্যাপারটা বাতিল করাও যেতে পারে। যদি এমনটা করা যায়, তাহলে কিছুটা হলেও সামঞ্জস্য বিধান করা সম্ভব হবে বলে মনে করি। কেননা মুক্তিযোদ্ধা কোটা থেকেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধী কোটা। প্রতিবন্ধীদের মধ্যে যারা যোগ্য তাদের সুযোগ করে দেয়াটাই একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশের জন্য বড় সফলতা বলে আমি মনে করি। নারী কোটাও কমানো উচিত। কারণ বর্তমানে পুরুষদের সঙ্গে নারীরা সফলতার দিক থেকে সমানতালে চলার চেষ্টা করছে বরং অনেক ক্ষেত্রে আরও ভালো এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০% কোটা রাখা, এটা যেন নারীদের যোগ্যতাকেই বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করছে তথা অযোগ্যতাকেই তুলে ধরছে, যা উন্নয়নশীল দেশের জন্য সুখকর নয়। আবার পোষ্য কোটা নামে যেই কোটা আছে, ওটা একেবারেই বাদ দেয়া সমীচীন বলে আমি মনে করি। এতে করে যোগ্য ব্যক্তিদের অধিক সুযোগ দেয়া হবে।

ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি, দেশে এখন মুক্তিযোদ্ধার এমন সন্তান নেই যারা কোনো চাকরিতে জয়েন করবে। বিপরীতে দেখা যাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা এই সুযোগটা গ্রহণ করছে। যেটা একেবারেই অযৌক্তিক।

পরিশেষে বলা যায়, চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানো হোক, তবে ৩৫ না করে তা ৩২ করা যেতে পারে এবং পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়ানো উচিত বলেও আমি মনে করি। যুবকরা যেন নিজে উদ্যোগে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করতে পারে অতিরিক্ত সরকারি চাকরিমুখী না হয়ে, এক্ষেত্রে কর্যে হাসানার (বিনা সুদে ঋণ) ব্যবস্থা করা যায় কিনা, এটাও সরকারকে বা সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের ভাবা উচিত। অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে অবাঞ্ছিত কোটা পদ্ধতি বাতিল করে, যোগ্য ব্যক্তিদের জায়গা করে দেয়াটাই হবে আসল চ্যালেঞ্জ এবং সফলতার জায়গা।

 

শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০