মেহেদী হাসান: রেমিট্যান্স আহরণকারী প্রধান দেশগুলো থেকে কমছে রেমিট্যান্স। গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) প্রধান ১১টি দেশ থেকে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ২৪৮ কোটি ডলার। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্র থেকেই কমেছে ৭২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর পরেই রয়েছে সৌদি আরব। এছাড়া গত অর্থবছরে সার্বিকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ২১৬ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স কমেছে, এর পরিমাণ ১৩৮ কোটি ডলার। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব থেকে কমেছে ৬৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার; আরব আমিরাত থেকে ৬২ কোটি ডলার; কুয়েত থেকে ৪৫ লাখ ডলার; ওমান থেকে এক কোটি ৩৮ লাখ ডলার এবং বাহরাইন থেকে চার কোটি ৯৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স কমেছে।
এছাড়া অন্য দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ১১০ কোটি ডলার। অন্য দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য থেকে কমেছে পাঁচ কোটি ৪০ লাখ ডলার; লিবিয়া থেকে এক কোটি ডলার; সিঙ্গাপুর থেকে প্রায় ৯ কোটি ডলার; ইরান থেকে দুই লাখ ডলার এবং মালয়েশিয়া থেকে ২২ কোটি ছয় লাখ ডলার।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শীর্ষ দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স কমার অন্যতম কারণ হচ্ছে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দরপতন। জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও কুয়েতের মতো উপসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফলে ওইসব দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমে গেছে। তবে জ্বালানি তেলের দাম কমার পাশাপাশি রেমিট্যান্স কমার পেছনে ডলারের সঙ্গে বেশ কিছু দেশের স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন, সৌদি আরবে আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) সংক্রান্ত খরচ বৃদ্ধি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিদেশে স্থায়ী হওয়া ও অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধিও দায়ী।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর শাহা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বেশ কিছু কারণে রেমিট্যান্স কমেছে। তবে আমাদের দিক থেকে রেমিট্যান্স বাড়াতে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অপব্যবহার রোধেও আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। বেশ কয়েকটি দেশে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। প্রবাসী আয় বিতরণের সঙ্গে যুক্ত দেশের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কিছু এজেন্টের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।’
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯টি দেশ থেকে রেমিট্যান্স কমেছিল ৭৫ কোটি ১১ লাখ ডলার। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে কমেছিল ৬০ কোটি ৬১ লাখ ডলার এবং অন্য দেশগুলো থেকে কমেছিল ১৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর মধ্যে শুধু সৌদি আরব থেকে কমেছিল ৩৫ কোটি ৫১ লাখ ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা কমেছে।
এদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কাতার, জার্মানি, জাপানসহ অন্যান্য দেশ থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৩২ কোটি ডলার। এর মধ্যে কাতার থেকে বেড়েছে ১৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার; জার্মানি থেকে ৫৬ লাখ ডলার; জাপান থেকে তিন লাখ ডলার এবং অন্যান্য দেশ থেকে ১৬ কোটি ৭৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স বেড়েছে।
উল্লেখ্য, অবৈধ আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত থাকায় মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের দুই হাজার ৮৮৭টি এজেন্টের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে এক হাজার ৮৬৩টি গ্রাহক হিসাব বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী এসব সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। দেশে-বিদেশে রেমিট্যান্স আয় বিতরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক বিশেষ পরিদর্শনে বিকাশের এসব এজেন্টের বিরুদ্ধে অনিয়ম ধরা পড়ে। দেশে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে অনিয়ম খুঁজে বের করতে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরব পরিদর্শন করে তথ্য সংগ্রহ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
Add Comment