বিএমডিএ’র সেচ ব্যবস্থায় কৃষকের সেচ খরচ কমছে

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁও। জেলায় তেমন বড় কোনো শিল্পকারখানা না থাকায় কৃষিকাজই এ অঞ্চলের কৃষকের একমাত্র আশা-ভরসা। ঠাকুরগাঁও উঁচু ও খরাপ্রবণ জেলা। আবাদি জমিতে সেচ সুবিধা ছাড়া বিভিন্ন মৌসুমে ধান, গম, ডাল, পাট, ভুট্টা, আলু ও বিভিন্ন সবজির ভালো ফলন ফলানো অসম্ভব। তাই স্বল্পমূল্যে কৃষকদের মধ্যে সরকারিভাবে সেচ সুবিধা দিতে জেলায় অধিক পরিমাণে গভীর নলকূপ, সৌরবিদ্যুৎ চালিত লো লিফট পাম্প ও সোলার সেচ পাম্প কৃষকের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে ধান, গম, ভুট্টা, আলু ও সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন বহুগুণে বাড়বে এবং জেলার কৃষকরাও দেশ অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হবেন। তার ধারাবাহিকতায় কৃষকের মাঝে স্বল্পমূল্যে সেচ সুবিধা দিয়ে নিরলসভাবে মাঠে কাজ করে চলেছে ঠাকুরগাঁও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)।

ঠাকুরগাঁওয়ে ৫টি উপজেলায় ১ হাজার ৪৩২ গভীর নলকূপ ও ৬টি পাতকুয়ার সাহায্যে স্বল্পমূল্যে সেচ সুবিধা পাচ্ছে কৃষকরা। এছাড়া ৮০টি লো লিফট পাম্প (এলএলপি) সোলার ও বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্পের সাহায্যে ভূ-উপরিস্থ বিভিন্ন নদীর পানি ব্যবহার করে স্বল্প খরচে সবজিসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন জেলার কৃষক। এতে একদিকে  কৃষকের সেচ খরচ অনেক  কমছে এবং পানির অপচয় রোধ হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিএমডিএ অফিস সূত্র জানায়, গভীর নলকূপের  পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে এনে ফসল উৎপাদনের জন্য ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে ২০২০-২১ থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ঠাকুরগাঁওয়ে ৫টি উপজেলায় মোট ৮০টি এলএলপি ও সৌরবিদ্যুৎচালিত পাম্প স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার, যা গত বছর স্থাপন সম্পন্ন হয়। গত বছর থেকে এ সেচ পাম্প ব্যবহার করে প্রকল্পভুক্ত কৃষক বিভিন্ন সবজি, করলা, ফুলকপি, আলু, কচুসহ ইরি ও বোরো ধান চাষ করে সুফল পাচ্ছেন।

উপকারভোগী কৃষকরা জানান, সমবায় ভিত্তিতে ৬০ একর জমি নিয়ে কৃষকদের মাঝে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরে একটি করে সৌরবিদ্যুৎচালিত পাম্প ও ভূগর্ভস্থ ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও ২৫টি আউটলেটের মাধ্যমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা তৈরি করে দেয়। আর কৃষকের খরচ কমানো ও পানির অপচয় রোধে এ প্রকল্পগুলো হাতে নেয় সরকার।

ঠাকুরগাঁও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে ৫টি উপজেলায় মোট ১ হাজার ৪৩২ গভীর নলকূপ ও ৬টি পাতকুয়া ও ৮০টি এলএলপি সোলার  পাম্পের সাহায্যে স্বল্প খরচে ফসল উৎপাদন ও সেচসুবিধার পাশাপাশি ভূ-উপরিস্থ বিভিন্ন নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছেন কৃষক। এতে ঠাকুরগাঁওয়ের টাঙ্গন, লাচ্ছি ও নাগর নদী ও খালের পানি ব্যবহার করে প্রায় চার হাজার একর জমি সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে। ফলে ফসল উৎপাদন খরচ কমবে। সোলার প্যানেল দিয়ে সারাদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে সেচ পাম্পে। তবে যতক্ষণ সূর্যের আলো থাকবে ততক্ষণ সেচ পাম্প চলবে। তবে পাম্প হাউসটিতে আলোর চাহিদা পূরণে একটি সৌরচালিত ব্যাটারি রয়েছে। ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত পাম্পের মাধ্যমে একবার সেচ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যয় হয় প্রতি একরে ডিজেলে ৪০০-৫০০ টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে সৌরচালিত পাম্প দিয়ে সেচ দিলে ব্যয় হয় ২০-৩০ টাকারও কম।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের কৃষক মো. পজিরুল ইসলাম জানান, ‘আমরা বিএমডিএর গভীর নলকূপের সাহায্যে স্বল্প খরচে পানির অপচয় রোধ করে ধান, গম, ভুট্টা, আলু ও সবজি আবাদে লাভবান হচ্ছি। এতে আমাদের সেচ খরচ অনেক কম হচ্ছে। আমার মতে, যেসব এলাকায় এই গভীর নলকূপ নেই সেখানে সরকারিভাবে সোলার সেচ পাম্প স্থাপন ও গভীর নলকূপগুলোকে আরও আধুনীকায়ন করলে কৃষকরা আরও বেশি উপকৃত হবে; ফসল উৎপাদন বহুগুণ বাড়বে।’

ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গীতে উপজেলার সীমান্তবর্তী আমজানখোর ইউনিয়নের বেউরঝারি এলাকার কৃষক সুনীল দাস, সুব্রত পাল, অধীনসহ অন্য কৃষকরা জানান, সরকারের এ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা চাষাবাদ করে সুফল পাচ্ছি এবং লাভবান হচ্ছি। কারণ এতে সেচ খরচ নেই বললেই চলে। ডিজেল বা কোরোসিনচালিত সেচযন্ত্র ব্যবহার করলে যে খরচ হতো তার তুলনায় এটি একবারে সামান্যই। চলতি বছর ভূ-উপরিস্থ ব্যবহার করায় স্বল্প পরিসরে সৌরবিদ্যুৎচালিত এলএলপি ব্যবহার করে ১০০ একর সবজি করলা, বেগুন ও ফুলকপি, ঢেঁরস, হলুদ, শাক ও বিভিন্ন জাতের ধান আবাদ করছি। পূর্বে সেচ সুবিধা না থাকার কারণে এ জমিগুলোয় ঠিকমতো আবাদ করা যেত না।

ঠাকুরগাঁও বরেন্দ্র বহমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক, রেজা মো. নূরে আলম জানান, জেলায় কৃষকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকের স্বল্পমূল্যে সেচ সুবিধা দিতে আমদের কার্যক্রম চালু সেচ সুবিধার্থে সেচনালা সম্প্রসারণ, জলাবদ্ধতা নিরসন, সোলার সেচ পাম্প স্থাপনসহ কৃষকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করে চলছি।

ঠাকুরগাঁওয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ইকবাল হোসেন জনান, সৌরবিদ্যুচালিত সেচ পাম্পের মাধ্যমে জমিতে প্রতি মৌসুমে সেচ দিতে যেখানে একরে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা, যেখানে ডিজেলে খরচ হয়  ৬-৭ হাজার টাকা। তিনি আরও জানান, খালের পানিতে পলি মাটি থাকেÑতাই এ ব্যবস্থা প্রয়োগে সেচ দিলে ফসলের উৎপাদন ব্যাপক হারে বাড়বে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘বরেন্দ্র বহুমুখীর উদ্ভাবন করা প্রিপেইড কার্ড কৃষিপ্রধান এ জেলার কৃষকদের এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। এলএলপি সোলার ও সৌরবিদ্যুচালিত পাম্প ব্যবহারের ফলে কৃষক ফসল উৎপাদনে আরও এগিয়ে যাবে।’

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০