কৃষি খাসজমি উদ্ধার করে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মধ্যে বন্দোবস্ত দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। এক্ষেত্রে খাসজমি উদ্ধারে ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে রাষ্ট্রীয় কাজ পরিচালনায় ভ‚মিসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি জাতীয় কৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা নির্বাহী কমিটির সভাপতি ভ‚মিমন্ত্রীর আহবান সময়োপযোগী। আমরা আশা করি, ভূমিমন্ত্রীর এ বক্তব্য নিছক আহবান নয়, এটি মেনে চলতে তৎপর হবেন সংশ্লিষ্টরা। মন্ত্রণালয়ও সময়-সময় এর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবে।
গত বুধবার কমিটির সভায় ভূমিমন্ত্রী আরও বলেছেন, সাধারণ মানুষ এখন সহজেই নামজারি, জমাভাগ, ভ‚মি উন্নয়ন কর, জমির নকশা ইত্যাদি ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করতে পারছে। কৃষি, অকৃষি, জলাভূমি, বনভূমি, পাহাড় ও শিল্পাঞ্চলে ভাগ করে ল্যান্ড জোনিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
আমাদের ভূমির তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। রাস্তাঘাট, বাসগৃহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা প্রভৃতি নির্মাণে এর পরিমাণ কমেই চলেছে। প্রায়ই নদীভাঙন হয়, এতেও ভূমি কমে। ভূমি বৃদ্ধির সুযোগ না থাকায় এটির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের বিকল্প নেই।
ভূমির যথাযথ ব্যবহারে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বা এ বিষয়ে সরকার উদাসীন এমন নয়। কৃষি, অকৃষি, জলাভূমি, বনভূমি, পাহাড় ও শিল্পাঞ্চলে ভাগ করে ল্যান্ড জোনিং এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
দেশে জমি নিয়ে বিরোধ, রেজিস্ট্রেশন জটিলতা, জালদলিল ও ফৌজদারি-দেওয়ানি মামলায় প্রতিবছর অনেক অর্থ খরচ হয়, ঘটে প্রাণহানিও। এক্ষেত্রে ভূমি নিয়ে বিরোধে কাজ করছে ভূমি আপিল বোর্ড। জাতীয় তথ্য বাতায়নে সন্নিবেশিত হয়েছে উত্তরাধিকার বাংলা এক ক্লিকেই সম্পত্তির হিসাব। ভ‚মি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি বা এর যথাযথ ব্যবহারে এগুলোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বৈকি। তবে আরও কিছু ব্যবস্থা ভূমির যথাযথ ব্যবহারে সহায়তা জোগাবে বলে আমরা মনে করি।
অনেক প্রবাসী জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করেন। অবশ্য গ্রামাঞ্চলে বাড়িঘর নির্মাণ এবং যে কোনো উন্নয়নে ভ‚মি ব্যবহারের প্রয়োজনে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের বিধান মন্ত্রিসভায় পাস হয়েছে। এটি না মানলে রয়েছে সাজার ব্যবস্থা।
রাস্তার পাশের জমি হলে কিংবা বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ থাকলে জমির দাম বেড়ে যায় অনেক। এমন জমিও দখল করে একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী। তারা বস্তি গড়ে তুলে ভাড়া দেয়। এটিকে জমির যথাযথ ব্যবহার বলা যায় না। এ ধরনের দখলদাররা যাতে প্রশাসন বা ক্ষমতাসীনদের আনুক‚ল্য না পায়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
রেলওয়ে, সড়ক ও জনপথসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থার অনেক জমি পরিত্যক্ত কিংবা বেদখল হয়ে আছে। এগুলো মাঝেমধ্যে সরকার উদ্ধারও করে, কিন্তু পরবর্তী সময়ে নজরদারি করে না বা যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হয় না। সরকার যেহেতু ভ‚মির ব্যবহারে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারে না, সেক্ষেত্রে উদ্ধার করা জমি বাজারদরে বেসরকারি খাতে বিক্রি করে দিতে পারে।
খাসজমি উদ্ধারের পর তা প্রকৃত ভ‚মিহীন ও গৃহহীনদের মধ্যে বন্দোবস্ত দেওয়া হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে দখল হওয়া ও পরিত্যক্ত ভূমি উদ্ধারের পর সেটির সদ্ব্যবহারও।
Add Comment