চলতি বছরের এপ্রিলেও দেশে ৯ শতাংশের ওপরে ছিল মূল্যস্ফীতি। এই মূল্যস্ফীতি সরকারের ঘোষিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে একদমই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বাজেটে মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল সরকার। কিন্তু পুরো অর্থবছর জুড়েই মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে বেশিরভাগ সময় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের ওপরে। কোনো কোনো মাসে তা ১৩ শতাংশ পর্যন্ত উঠে যায়। এত উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেশের অর্থনীতির জন্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশে প্রবৃদ্ধির জন্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্তি মূল্যস্ফীতি জনজীবন অতিষ্ঠ করে তোলে। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি কমে ৯.২৪%’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, দেশে চলতি বছরের এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে। এ মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। মার্চে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তবে সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের কাছাকাছি ছিল। মার্চের মতো এপ্রিলেও এই মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি মার্চের ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ থেকে কমে এপ্রিলে হয় ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস পরিস্থিতি। এর প্রভাব পড়েছে ব্যক্তিগত ভোগে। নিম্নআয়ের মানুষ উচ্চ মূল্যের কারণে তাদের প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য কিনতে পারছে না। ফলে সেসব পরিবারে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। অনেক পরিবার বাড়তি খরচের চাপ সামলাতে না পেরে পরিবারের অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেদের কাজে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে। এতে স্কুল থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে। শুধু তাই নয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেশের মোট দেশজ উৎপাদের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যক্তিগত ভোগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর জিডিপি প্রবৃদ্ধির ৬৮ শতাংশই ব্যক্তি খাতের ভোগের ওপর নির্ভরশীল। এমন পরিস্থিতিতে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির স্বার্থে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি সফলতা দেখিয়েছে শ্রীলংকা। দেশটি চরম আর্থিক দূরাবস্থা থেকে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। একসময় দেশটিতে ১০০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে যায় মূল্যস্ফীতি। কিন্তু সেখানকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দক্ষতা ও সঠিক পদক্ষেপের ফলে মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসে। আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও শ্রীলংকা থেকে শিক্ষা নিতে পারে। যে শ্রীলংকা একসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়েছিল, সেই শ্রীলংকা মাত্র এক বছরের ব্যবধান সব ধরনের দায়-দেনা পরিশোধ করে ফের ঘুরে দাঁড়াল। অথচ বাংলাদেশে ওই ধরনের কোনো নাজুক পরিস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সমন্বিত উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা জরুরি।