নিজস্ব প্রতিবেদক : বন্ড সুবিধায় বিভিন্ন ধরনের কাপড় ও এক্সেসরিজ আমদানি করা হয়েছে। সেই পণ্য খোলাবাজারে বিক্রির জন্য অননুমোদিত গুদামে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। খোলাবাজারে বিক্রি করার আগেই কাস্টমস গোয়েন্দা বিপুল পরিমাণ বন্ড সুবিধার কাপড় ও এক্সেসরিজ আটক করেছে। সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স গ্রুপের সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের চেষ্টা করেছে।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ফৌজদারহাট শিল্প এলাকার একটি অননুমোদিত গোডাউন থেকে প্রায় পৌনে ছয় কোটি টাকার বন্ড সুবিধার কাপড় ও এক্সেসরিজ আটক করেছে, যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। পণ্য আটকের পর অননুমোদিত বন্ড গুদাম সিলগালা করা হয়েছে। একইসঙ্গে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করা সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। কাস্টমস গোয়েন্দার একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার সূত্রমতে, চট্টগ্রামের সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড বন্ড সুবিধায় আমদানি বিভিন্ন ধরনের কাপড় ও এক্সেসরিজ একটি অননুমোদিত গুদামে মজুদ করা হয়েছে। শুল্কমুক্ত সুবিধার এসব পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়া হবে—এমন তথ্য পায় কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। এরই ভিত্তিতে কাস্টমস গোয়েন্দার চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের একটি টিম ১৩ মে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট শিল্প এলাকায় সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের একটি অননুমোদিত গুদামে অভিযান পরিচালনা করেন। গুদামটি সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেডের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বেঙ্গল সিনথেটিক ফাইবার্স লিমিটেডের পাশে।

অভিযানের সময় গুদামে বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল, তৈরি পণ্য ও ওয়েস্টেজ পাওয়া যায়। পরে পণ্যগুলো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় হিসাব করা হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্যের সঙ্গে আটক করা পণ্য হিসাব করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালে এক বছর বা ১২ মাসে ৫ থেকে ১০ ডলারে প্রতি কেজি ফ্রেবিক্স আমদানি করেছে। ফলে হিসাব করার সময় প্রতি কেজি ৫ ডলারে হিসাব করা হয়েছে।

আটক করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে, কটন ফ্রেবিক্স ৭ হাজার ৯০৩ কেজি। প্রতি কেজি ৫ ডলার হিসেবে এই ফেব্রিক্সের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য প্রায় ৪৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর প্রায় ৩৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা। ৫০ হাজার ২১৪ কেজি নিট ফ্রেবিক্স পাওয়া গেছে। যার শুল্কায়নযোগ্য মূল্য প্রায় দুই কোটি ৭৬ লাখ টাকা। যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর প্রায় দুই কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ২ হাজার ৫৩৭ কেজি ডেনিম ফ্রেবিক্স পাওয়া গেছে। যার শুল্কায়নযোগ্য মূল্য প্রায় ১৪ লাখ টাকা। যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর সাড়ে ১২ লাখ টাকা।
মিক্সড ফ্রেবিক্স পাওয়া গেছে ১৬ হাজার ৫৬ কেজি। যার শুল্কায়নযোগ্য মূল্য প্রায় ৮৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা। যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর ৭৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। ৪৪৩ কেজি ফ্লি অ্যান্ড ফার ফ্রেবিক্স পাওয়া গেছে। যার শুল্কায়নযোগ্য মূল্য প্রায় এক লাখ ৪৬ হাজার টাকা। যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার টাকা।

অপরদিকে, ৩৬ হাজার ৪৬০ পিস আরএমজি পাওয়া গেছে। আড়াই ডলার হিসেবে যার শুল্কায়নযোগ্য মূল্য প্রায় ৯০ লাখ ২৩ হাজার টাকা। যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর প্রায় এক কোটি ১০ লাখ টাকা। ১৬ হাজার ২১৭ পিস গার্মেন্টস এক্সেসরিজ পাওয়া গেছে, আড়াই ডলার হিসেবে যার শুল্কায়নযোগ্য মূল্য প্রায় ৪৪ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর প্রায় ৫৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। ৬৫ হাজার ৯৯ কেজি গার্মেন্টস ওয়েস্টেজ পাওয়া গেছে। যাতে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য। ২৯ টাকা কেজি হিসেবে যার মূল্য প্রায় ১৩ লাখ টাকা। যাতে প্রযোজ্য ভ্যাট ৬৫ হাজার ৯৯ টাকা। মোট হিসেবে আটক করা পণ্যের মোট শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ৫ কোটি ৭১ লাখ ২২ হাজার ১৯৫ টাকা। যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর ৫ কোটি ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ৩৪৩ টাকা।
কাস্টমস গোয়েন্দার একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভিযানের সময় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা (ডিজিএম-কমার্শিয়াল) রাশু মহাজন উপস্থিত ছিলেন। তিনি স্বীকার করেন যে, গুদামটি চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের অনুমোদন ছিলো না। ফলে আটক করা পণ্য তাদের জিম্মায় দিয়ে গুদাম সিলগালা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধায় আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে কোনো পণ্য তৈরি করেনি। খোলাবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে অননুমোদিত গুদামে এসব পণ্য সংরক্ষণ করেছে। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।