দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ১৮৬৩ সালের ১৯ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে তার জš§। তিনি কবি, নাট্যকার, গীতিকার ছিলেন। দ্বিজেন্দ্রলাল হুগলি কলেজ থেকে বিএ এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ (১৮৮৪) পাস করেন। পরে কিছুদিন চাকরি করে তিনি সরকারি বৃত্তি নিয়ে কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য লন্ডন যান এবং সেখানে ১৮৮৬ সাল পর্যন্ত অবস্থান করেন। দ্বিজেন্দ্রলালের সংগীতশিক্ষার হাতেখড়ি পিতার কাছে। তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন পিতার কাছ থেকে। তারপর বিলেতে থাকা অবস্থায় তিনি পাশ্চাত্য সংগীত শিক্ষার মাধ্যমে তার সংগীতপ্রতিভাকে শাণিত করেন, যা পরে বাংলা গানের ক্ষেত্রে নতুন নতুন ধারা উদ্ভাবনে সহায়ক হয়। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি প্রায় পাঁচশ গান রচনা করেন। প্রথমদিকে তার গান ‘দ্বিজুবাবুর গান’ নামে পরিচিতি ছিল; পরেতা ‘দ্বিজেন্দ্রগীতি’ নামে পরিচিত হয়। দ্বিজেন্দ্রলাল খুব অল্পবয়স থেকেই গান রচনা করতেন এবং নিজেই সুর দিয়ে গাইতেন। বিলেত যাওয়ার আগে মাত্র সতেরো বছর বয়সের মধ্যে লেখা একশ আটটি গান নিয়ে তার প্রথম গীতসংকলন আর্য্যগাথা (প্রথম ভাগ) ১৮৮২ সালে প্রকাশিত হয়। কিশোর বয়সে লেখা এ গানগুলোতে প্রকৃতির মনোরম সৌন্দর্য ও লাবণ্য, জগতের শোক-জরাজাত দুঃখাবষণ্নতা, ঈশ্বরভক্তি এবং স্বদেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে। এ পর্বের একটি গান হলো: ‘গগনভূষণ তুমি জনগণমনোহারী!/ কোথা যাও নিশানাথ, হে নীল নভোবিহারী!।’ দ্বিজেন্দ্রলাল রচিত জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গানগুলোর মধ্যে ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’, ‘ধনধান্যপুষ্পভরা’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দ্বিজেন্দ্রলালের অসাধারণ সংগীতপ্রতিভার সঙ্গে এক হয়ে গিয়েছিল বিদেশি শাসকদের প্রতি তার বিদ্বেষী মনোভাব, যার প্রতিফলন ঘটেছে তার রচিত বিভিন্ন স্বদেশি সংগীতে। প্রেমের গান রচনায়ও তিনি ছিলেন কৃতবিদ্য। গানের কথার কোনো অংশে কতটা গতিতে সুরের আরোহণ-অবরোহণ হলে প্রেমের আবেগ কতখানি ফুটে উঠবে, সে বিষয়ে তার সচেতনতা লক্ষণীয়। প্রেমের গানে কখনও কখনও বাংলা টপ্পার কোমল দোলা দিয়ে গানের আবেশ তৈরি করে মোহনীয় সুরসৃষ্টি তার অসাধারণ কীর্তি। একজন শিল্পীর কণ্ঠের আয়ত্তের মধ্যে স্বর ক্ষেপণ করার মতো স্বরপরিকল্পনায় তিনি ছিলেন সদা সতর্ক। সে কারণে সুরের একটা উদার ও ওজস্বী ভাব সব সময় তার গানে পরিলক্ষিত হয়। একটি সুস্থ সংগীত পরিমণ্ডল সৃষ্টিতে তার এ অবদান বাংলার সংগীতাঙ্গনে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ১৯১৩ সালের ১৭ মে কলকাতায় তার মৃত্যু হয়। [সংগৃহীত]
