সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বিশ্বের উন্নত বন্দর ব্যবস্থাপনায় জড়িত খ্যাতমানা কোম্পানিগুলো সরকারি ও বেসরকারি পার্টনারশিপ মডেলে বিনিয়োগের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন টার্মিনাল পরিচালনায় যুক্ত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের চতুর্থ টার্মিনাল পরিচালনায় প্রথম বিদেশি অপারেটর হিসেবে যুক্ত হচ্ছে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল। এছাড়া অন্যান্য টার্মিনাল ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হতে আগ্রহী আবুধাবি পোর্ট গ্রুপ (এডি পোর্টস), সিঙ্গাপুরের পিএসএ, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড ও দেশি ওমেরা গ্রুপের সঙ্গে বিদেশি একাধিক জ্বালানি কোম্পানির কনসোর্টিয়াম ও ডেনমার্কের টার্মিনাল অপারেটর এপিএম।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, নানা প্রক্রিয়া ও দর-কষাকষি শেষে গত ৬ ডিসেম্বর ‘কনসেশন’ চুক্তি মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানের হাতে ২২ বছরের জন্য তুলে দেয়া হলো টার্মিনাল পরিচালনার ভার। গত চার মাসেও পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়নি। এছাড়া বে-টার্মিনাল তিনটি টামিনাল অপারেটরে যুক্ত হতে আগ্রহী আবুধাবি পোর্ট গ্রুপ, সিঙ্গাপুরের পিএসএ, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড এবং দেশি ওমেরা গ্রুপের সঙ্গে বিদেশি একাধিক জ্বালানি কোম্পানির কনসোর্টিয়াম। তাদের সম্মিলিত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে লালদিয়া কনটেইনার টামিনালে ডেনমার্কের টার্মিনাল অপারেটর এপিএম টার্মিনালস। তাদের সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার।
টার্মিনাল অপারেটের কাজ সম্পর্কে বন্দর কর্মকর্তারা বলেন, টার্মিনালে জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার নামিয়ে চত্বরে রাখা; রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার জাহাজে তোলা; কনটেইনার সংরক্ষণ, স্থানান্তর ও তা খুলে পণ্য খালাস প্রভৃতি কাজ হয়ে থাকে। এসব ব্যবস্থাপনা বাবদ অর্থ আদায় করবে তারা, যা বন্দরের সঙ্গে ভাগাভাগি হবে। সব ধরনের মাশুলও আদায় করছে বন্দর। শুধু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজের বিনিময়ে দরপত্র অনুযায়ী নির্দিষ্ট অর্থ দেয়া হয়।
চবক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, পিপিপির আওতায় সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে জিটুজি ভিত্তিতে চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে তারা কিছু যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করেছে। এছাড়া বন্ডেড ওয়্যার হাউজের লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কিছু ছাড়পত্র সংগ্রহে কাজ করছে। চুক্তির পর বন্দরকে এককালীন ও বার্ষিক নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেবে। এ ছাড়া সৌদি কোম্পানি কনটেইনার ওঠানো-নামানোর জন্য শিপিং কোম্পানি ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যে ফি পাবে, তা থেকে কনটেইনারপ্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বন্দর পাবে। অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ল্যান্ডলর্ড’ মডেলের মাধ্যমে পরিচালনার যুগে প্রবেশ করেছে। এত দিন পরিচালনা হয়ে আসছে ‘টুলপোর্ট’ মডেলে। টার্মিনাল অপারেটরে যুক্ত হতে আগ্রহী আবুধাবি পোর্ট গ্রুপ, সিঙ্গাপুরের পিএসএ, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড ও দেশি ওমেরা গ্রুপের সঙ্গে বিদেশি একাধিক জ্বালানি কোম্পানির কনসোর্টিয়াম। অন্যদিকে লালদিয়া কনটেইনার টামিনালে ডেনমার্কের টার্মিনাল অপারেটর এপিএম টার্মিনালস। তাদের সঙ্গে চলতি বছর চুক্তি হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কনটেইনার (প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা) পরিবহন হয়েছে ৩০ লাখ ৫০ হাজার, যা ২০২২ সালে পরিবহন হয়েছিল ৩১ লাখ ৩২ হাজার। আর ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের চার হাজার ১০৩টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছিল। ২০২২ সালে চার হাজার ৩৬১টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছিল।