বেশি দামে মসলা বিক্রির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশাসন চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভোগ্যপণ্যে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়েছে।
বছর ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি হয়েছে ৩০ হাজার ৭১৭ টনের বেশি। গত বছর অক্টোবর থেকে দফায় দফায় বেড়েছে মসলার দাম। অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রিসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে ৬ প্রতিষ্ঠানকে ২৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। শনিবার পরিচালিত অভিযানে কয়েকটি বিষয় উঠে এসেছে। যেমন, বেশি দামে মসলা বিক্রি, মূল্যতালিকা না রাখা, তালিকা হালনাগাদ না থাকা, পণ্যের মোড়কে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ না থাকা।
ঈদুল আজহা ঘনিয়ে এলে মসলার দাম বাড়ে প্রায় প্রতি বছর। কোরবানিতে মসলার অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা আগেই নানা বাহানায় মাংস রান্নার অত্যাবশ্যকীয় উপাদান এলাচ, জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ প্রভৃতির দাম বাড়িয়ে থাকেন। অবশ্য অতিরিক্ত শুল্ক, বন্দর থেকে পণ্য খালাসে বিলম্বে সরবরাহ কমে যাওয়া এবং ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানি খরচও বাড়ে। এসব কারণে মসলার দাম বাড়লে সেটিকে যৌক্তিকই বলা যেতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে যৌক্তিক ও স্বাভাবিক কারণ ছাড়াও পণ্যের দাম বাড়ে। এটি হলো মুনাফালোভী একশ্রেণির ব্যবসায়ীর অসাধুতা এবং মজুতের মাধ্যমে তাদের সৃষ্ট কৃত্রিম সংকটে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া।
ঈদুল আজহার বাকি এক মাস। আমাদের কথিত দূরদর্শী ব্যবসায়ীরা সুযোগ হাতছাড়া করছেন না। কোরবানি সামনে রেখে প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে পণ্য আমদানি ও মজুত করেছে। ফলে বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য আছে। তবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীরা আমদানির পথে থাকা পণ্যের বাড়তি খরচ বিবেচনায় মাথায় রেখে লেনদেন করতে চাইছেন। এতেই ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
প্রতি বছর বলা হয়, রোজার সময় দ্রব্যের দাম বাড়বে না। বাড়েও না। কারণ অনেক আগেই বাড়িয়ে ফেলেন ব্যবসায়ীরা। ওই ফরমুলায় ব্যবসায়ীরা চাইবেন মসলার দাম কোরবানির ঈদের আগেই বাড়িয়ে ফেলতে। এখন বড় করপোরেট হাউজও ব্যাপকহারে মসলার ব্যবসা করছে। সিন্ডিকেট করে এসব প্রতিষ্ঠান যেন মসলার দাম বাড়াতে না পারে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। মজুতদারদের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির প্রবণতাও রোধ করতে হবে। এজন্য বড় ব্যবসায়ীর গুদামগুলোয় নদরদারি করতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে।
ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন, মসলা আমদানিতে বেশি শুল্ক দিতে হয়। ফলে তা চোরাইপথে দেশে প্রবেশ করে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন আমদানিকারকরা। এসব বিষয় খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায় হতে পারে স্থানীয়ভাবে এর উৎপাদন বাড়ানো। মসলা চাষে সাফল্য দেখিয়েছেন আমাদের চাষিরা। তাদের উৎসাহিত করতে হবে। আমাদের মসলা গবেষণা কেন্দ্র এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারে। আদা চাষেও উৎসাহিত করা যায় কৃষককে। এটি পতিত জমিতেও চাষ করা সম্ভব।