‘বিশেষ সুবিধায়ও থামেনি দরপতন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। তথ্যমতে, মঙ্গলবার দরপতনের মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টানা সাত কার্যদিবসে দরপতন হয়েছে। এতে সূচক কমেছে ৩২৬ পয়েন্ট। অন্যদিকে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে সূচক। পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের ক্রয়-ক্ষমতা বাড়াতে সিকিউরিটিজ কেনার সীমা ৪০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫০ কোটি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির লেনদেনে বিশেষ সুবিধা প্রদান করার প্রথম দিনে লেনদেন সামান্য বাড়লেও থামেনি দরপতন।
এর আগেও বেশ কয়েক দিন শেয়ারবাজারে টানা দরপতন চলছে। দরপতন ঠেকানোর উপায় খুঁজে বের করতে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বারবার বৈঠকও করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। গত ২২ এপ্রিল তিন প্রতিষ্ঠান ও ১০টি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা বৈঠক করেছেন। শেয়ারবাজারের বিদ্যমান সংকট থেকে উত্তরণে ওই দিন প্রাথমিকভাবে তিনটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এগুলো হলোÑপ্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ডিলার অ্যাকাউন্ট থেকে বাজারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান, ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে বিনিয়োগ সক্রিয় করা এবং মিউচুয়াল ফান্ডকে শক্তিশালী করা। বিএসইসি কমিশনাররা কতবার যে বলেছেন, শেয়ারবাজারের অংশীজন এবং ব্রোকাররা বাজারের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতামত গুরুত্বসহ মূল্যায়ন করছে এবং শেয়ারবাজারের বিভিন্ন বিষয়ে বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতামত ও পরামর্শের মাধ্যমে দেশের শেয়ারবাজারের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
শেয়ারবাজারের উত্থান-পতন স্বাভাবিক বিষয়। এটি সব দেশেই ঘটে থাকে। বিশ্ব গণমাধ্যমে মাঝেমধ্যে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ, সুদহার বৃদ্ধি এবং সম্ভাব্য শাটডাউনের প্রভাব পড়েছে মার্কিন পুঁজিবাজারে। এমনকি সব মিলিয়ে সবচেয়ে খারাপ সপ্তাহ পার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারÑএমন খবরও এসেছে। শেয়ারবাজারের উত্থান-পতন স্বাভাবিক। যুক্তরাষ্ট্রের মতো সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশেও হয়েছে এবং ঘুরেও দাঁড়িয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক ও অস্বস্তির বিষয় হলো, অন্য দেশগুলো পতন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়। আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিলেও তা তেমন সুফল বয়ে আনে না। ফলে বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারান। শেয়ারবাজারকে দীর্ঘ মেয়াদে চাঙা রাখতে উদ্যোগ দেখা যায় না।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগে বাজার পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে এ খাতের বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বাজার পড়ে গেলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট অংশীজন নড়েচড়ে বসে। এরপর কাজে ধারাবাহিকতা থাকে না; থাকে না নজরদারিও। ফলে পুুঁজিবাজার পরিস্থিতি সাময়িকভাবে মোকাবিলা করা গেলেও সমস্যা থেকেই যায়।
বাজার চাঙা করতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির তালিকাভুক্তিসহ ব্যাপক মুনাফা অর্জনকারী দেশি ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে বাজারে আনতে হবে এবং অবশ্যই শূন্য সহনশীলতায় বাজারে খেলোয়াড়দের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ অংশীজনের সমন্বিত পদক্ষেপে শেয়ারবাজার স্থিতিশীল হবে বলেই প্রত্যাশা।