বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত এবং সাহিত্যিক নূরজাহান বেগম। তিনি ‘মাসিক সওগাত’ এবং ‘সাপ্তাহিক বেগম’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের মেয়ে, মা ফাতেমা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুরের চালিতাতলী গ্রামে তার জš§। তার ডাক নাম ছিল নূরী। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের আদি নিবাস ছিল কুমিল্লার (তৎকালীন ত্রিপুরা) চাঁদপুর মহকুমার অন্তর্গত পাইকারদী গ্রামে। এই গ্রামটি অনেক বছর আগে মেঘনায় বিলীন হয়ে যায়। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন থাকতেন কলকাতায় ১১নং ওয়েলেসলি স্ট্রিটের একটি দোতলা বাড়িতে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান নূরজাহান বেগমের শৈশব কাটে গ্রামের বাড়িতে মা, মামা, দাদি, নানির সঙ্গে। নূরজাহান বেগমের শিক্ষাজীবন শুরু হয় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল বিদ্যালয় থেকে। এখানে তাকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। ১৯৪২ সালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন তিনি। তারপর আইএ ভর্তি হন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। তার আইএ পড়ার বিষয় ছিল দর্শন, ইতিহাস ও ভূগোল। কলেজে এসে তিনি সহপাঠী হিসেবে পান অনেককে, তাদের মধ্যে ছিল সাবেরা আহসান ডলি, রোকেয়া রহমান কবির, সেবতি সরকার, জোৎস্না দাশগুপ্ত, বিজলি নাগ, কামেলা খান মজলিশ, হোসনে আরা রশীদ, হাজেরা মাহমুদ, জাহানারা ইমাম। এই কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে আইএ পাস এবং ১৯৪৬ সালে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। সাহিত্যচর্চায় মেয়েদের জায়গা করে দিতে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন ১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই প্রথম সাপ্তাহিক ‘বেগম’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। প্রতিষ্ঠার প্রথম চার মাস পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। এরপর সম্পাদনার দায়িত্বে আসেন নূরজাহান বেগম। ১৯৫০ সালে সপরিবারে চলে আসেন বাংলাদেশে। তখন থেকে পত্রিকাটি ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালে লেখক, সাংবাদিক, শিশু সংগঠক ও কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা রোকনুজ্জামান খানের (দাদাভাই) সঙ্গে বিয়ে হয় নূরজাহান বেগমের। নারীদের উদ্দেশ্য করেই গোড়াপত্তন হলেও বেগম পত্রিকার পাঠক শুধু নারীরাই ছিলেন না। ধীরে ধীরে এ পত্রিকা পুরুষদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ৫ মে ২০১৬ অসুস্থ অবস্থায় নূরজাহান বেগমকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা চলা অবস্থায় ওই হাসপাতালে ২৩ মে মৃত্যুবরণ করেন। সংগৃহীত
