আবারও বাংলাদেশের রেটিং কমাল ফিচ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান আবারও অবনমন করেছে ফিচ রেটিংস। বিশ্বের অন্যতম প্রধান এই ঋণমান নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ফরেন কারেন্সি ইস্যুয়ার ডিফল্ট রেটিং (আইডিআর) ‘বিবি মাইনাস’ থেকে ‘বি প্লাস’ করেছে। তবে দেশের অর্থনীতি-সম্পর্কিত পূর্বাভাস স্থিতিশীল রেখেছে ফিচ রেটিংস।

দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান অবনমন করা হলেও বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদি ঋণমান ‘বি’ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় মুদ্রায় দীর্ঘমেয়াদি আইডিআর অবনমন করে ‘বিবি মাইনাস’ থেকে ‘বি প্লাস’; স্থানীয় মুদ্রায় স্বল্পমেয়াদি আইডিআর বি-তে অপরিবর্তিত এবং দেশের সীমা বা কান্ট্রি সিলিং ‘বিবি মাইনাস’ থেকে অবনমন করে ‘বি প্লাস’ করা হয়েছে। একটি দেশের দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি ঋণমান নির্ধারণের ক্ষেত্রে ফিচ এই কাঠামো ব্যবহার করে।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা ইস্যুয়ার ডিফল্ট রেটিং (আইডিআর) স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক (বিবি মাইনাস) করেছিল ফিচ। অর্থাৎ ছয় মাসের মধ্যে আবারও ঋণমান অবনমন করেছে মার্কিন এ প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বে যে তিনটি ঋণমান নির্ধারণী প্রতিষ্ঠান একত্রে ‘বিগ থ্রি’ হিসেবে পরিচিতি, ফিচ তাদের একটি। বাকি দুটি মুডি’স ও এসঅ্যান্ডপি।

ফিচ রেটিংস বলেছে, ঋণমান ‘বি প্লাস’-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ দীর্ঘমেয়াদে দুর্বল। বাংলাদেশ রিজার্ভক্ষয় ঠেকাতে অনেক ব্যবস্থা নিলেও এই পরিস্থিতির শিগগির উন্নতি ঘটতে যাচ্ছে না। তাই অর্থনীতির বহিস্থ খাতে ধাক্কা লাগলে বাংলাদেশ আরও অরক্ষিত হয়ে পড়বে।

২০২২ সাল থেকে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে বাংলাদেশ যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করে ফিচ রেটিংস। এসব নীতির কল্যাণে অভ্যন্তরীণ বাজারের ডলার-সংকট মোকাবিলা করাও সম্ভব হয়নি। এখন যে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে মুদ্রার বিনিময় হারের নমনীয়তা বাড়বে। তবে এ নীতির কল্যাণে যে বিদেশি মুদ্রাবাজারের সংকট মোকাবিলা করা যাবে বা রিজার্ভের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে, তা পরিষ্কার নয়।

ফিচ জানাচ্ছে, তাদের স্থিতিশীল পূর্বাভাসের অর্থ হলো, নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকবে। এটা যে কারণে সম্ভব হবে সেটা হলো, বহিস্থ অর্থায়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো নির্ভরযোগ্য ঋণদাতার সঙ্গে চুক্তি, সংস্থাটির নির্দেশিত সংস্কারকাজে হাত দেয়া ও ব্যাংকিং খাতের সমস্যা মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেয়া, সরকারি ঋণ সীমার মধ্যে রাখা এবং মধ্য মেয়াদে প্রবৃদ্ধির ভালো সম্ভাবনা।

বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার মূল কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে পুঁজি পাচার হওয়া। এ কথা জানিয়ে ফিচ রেটিংস আরও বলেছে, প্রবাসী আয়ের বড় একটি অংশ অনানুষ্ঠানিক পথে দেশে আসছে। এই পরিস্থিতিতে জানুয়ারির পর দেশের রিজার্ভ কমেছে ১৫ শতাংশ। এখন রিজার্ভ নেমে এসেছে ১৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে।

ফিচ আশা করছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, সে কারণে রিজার্ভ পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে। তবে বিদেশি মুদ্রার ব্যবস্থাপনায় নতুন যেসব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে এবং মুদ্রার আনুষ্ঠানিক বিনিময় হার অনানুষ্ঠানিক হারের সমান হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য জানিয়েছে, পুরোপুরি বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন ও সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু ফিচ বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মুদ্রার বিনিময় হার নমনীয় করার ক্ষেত্রে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া জটিল হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০