নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গতকাল সোমবার সকাল থেকে টানা ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। টানা বৃষ্টির ফলে হাঁটু থেকে বুক পরিমাণ পানিতে তলিয়ে গেছে বেশিরভাগ এলাকা।
পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল একেবারেই কম। ফলে রিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া গুনে অর্ধভেজা হয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। এছাড়া ভারী বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া চলমান থাকায় নগরের অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিন নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, কাপাসগোলা ও বাদুরতলা এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মূল সড়কগুলো হাঁটু থেকে কোমর কিংবা অনেক স্থানে বুক সমান পানিতে ডুবে গেছে। সড়কের পাশের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। অনেক দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার সড়কে গণপরিবহন একেবারেই নেই। চকবাজার থেকে বহদ্দারহাট যেতে টেম্পো ভাড়া পাঁচ টাকা। অথচ এখন আদায় করা হচ্ছে ১৫ টাকা। রিকশাগুলোও তিনগুণ ভাড়া হাঁকাচ্ছে।
শাহেদুল হক নামের এক যাত্রী বলেন, ‘চকবাজার থেকে বহদ্দারহাট টেম্পো ভাড়া পাঁচ টাকা। কিন্তু এখন জলাবদ্ধতার অজুহাতে ১৫ টাকা আদায় করা হচ্ছে। রিকশা ভাড়া চাচ্ছে ১০০ টাকা। তাই বাধ্য হয়ে তিনগুণ ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর আগ্রাবাদ, পতেঙ্গা ও হালিশহরের বেশিরভাগ এলাকাও পানিতে ডুবে গেছে।
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে একাধিক প্রকল্পে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে আট হাজার কোটি টাকা। এত টাকা ব্যয় হলেও সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে যাচ্ছে চট্টগ্রাম।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নগরবাসী। তাসলিমা বেগম নামের এক চাকরিজীবী বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টির পানিতেই রাস্তাঘাট ডুবে যায়। এত টাকা খরচের কোনো সুফল জনগণ পাচ্ছে না।’
বহদ্দরহাট এলাকার বাসিন্দা এস এম গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘সকালে কোমর পানিতে অফিসে যেতে হয়েছে। সারা বছর দেখি খালে কাজ চলছে। কিন্তু এই কাজের কোনো সুফল পেলাম না।’
অন্যদিকে, আজ মঙ্গলবারও ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। গত রোববার রাত ১২টা থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২৩৮.৪ মিলিলিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রাজধানীতে গতকাল সোমবার সকাল থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এই আবহাওয়া সোমবার সারারাত এবং আজ মঙ্গলবারও অব্যাহত থাকবে। টানা বৃষ্টিতে এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে মানুষের চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান সোমবার বিকালে বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি গত রোববার রাতে উপকূলে আঘাত হানার পর সেটি শক্তি হারিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। সেটি
এখন স্থল নিম্নচাপ হিসেবে যশোরে অবস্থান করছে। এর একটি অংশ ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চলের ওপরে অবস্থান করছে। এর প্রভাবেই ঢাকায় দমকা হাওয়া ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঢাকায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। চলতি মৌসুমে ঢাকায় এটাই সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঢাকায় ভোর থেকে দমকা হাওয়া বয়ে যায়। আজ পর্যন্ত থেমে থেমে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাবে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বেগে দমকা হাওয়া বয়ে গেছে গতকাল সকাল ৬টার দিকে, ঘণ্টায় ৫৯ কিলোমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. শামীম আহসান সোমবার বিকালে এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি স্থল নিম্নচাপ হিসেবে মঙ্গলবারের পর সিলেটের ওপর দিয়ে দেশের বাইরে চলে যাবে। এটি ওপরে উঠে এবং এর প্রভাবে উজানে ভারতের আসাম ও মিজোরামে বৃষ্টি ঝরবে।