পৌর এলাকায় বিরোধ মীমাংসা আইন সংস্কার সময়ের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পৌর এলাকায় বিরোধ মীমাংসা-সংশ্লিষ্ট ২০০৪ সালের আইন সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে। আদালতে মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতা, আর্থিক ক্ষতি ও মানসিক হয়রানির শিকার হওয়ার দরুন স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে পৌরসভা অনেক বিরোধের নিষ্পত্তি করতে পারে না। দেশের পৌর এলাকায় বিরোধ মীমাংসা-সংশ্লিষ্ট ২০০৪ সালের আইনে বিচারিক ক্ষমতার আর্থিক এখতিয়ার রয়েছে মাত্র ২৫ হাজার টাকা। অথচ ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে বিচারিক ক্ষমতার আর্থিক এখতিয়ার তিন লাখ টাকা। ফলে পৌর আইনটির দ্রুত সংশোধন জরুরি বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে গতকাল ‘বিরোধ মীমাংসা (পৌর এলাকা) বোর্ড আইন, ২০০৪ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনারে এ দাবি জানানো হয়। যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশন (এমএলএএ), মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ম্যাব), দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন-বাংলাদেশ এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম।

সেমিনারে প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো আইন স্মার্টলি করলে তিন মাস সময় লাগে। আলোচনা পর্যালোচনা করে একটা সারসংক্ষেপ তুলে ধরলে বিরোধ মীমাংসা (পৌর এলাকা) বোর্ড আইন সংশোধন নিয়ে কাজ করা সহজ হবে। আমরা চাই জনবান্ধব আইনের মাধ্যমে মানুষের আইনি সেবা পাওয়া সহজ হোক।’

সভায় জানানো হয়, বর্তমানে দেশের ৩২৯টি পৌরসভায় প্রায় পাঁচ কোটি লোক বসবাস করেন। পৌর মেয়র, কাউন্সিলর ও পৌর কর্মকর্তারা নাগরিক সেবার পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিকভাবে বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রতিনিয়ত ভূমিকা রাখছে। কিন্তু পৌর বোর্ডের আর্থিক এখতিয়ার খুবই সীমাবদ্ধ থাকায় পৌরসভাসমূহ আইনের আওতায় বিরোধ নিষ্পত্তিতে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছে না।

অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, আনুষ্ঠানিক আদালতে সালিশযোগ্য বা আপসযোগ্য মামলা নিষ্পত্তির জন্য কমপক্ষে দুই বছরের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়। আবার এই ধরনের ছোটখাটো বিরোধ বা মামলা থেকেই জš§ নেয় বৃহত্তর বিরোধ। ফলে মামলার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এমনকি প্রতিপক্ষকে হয়রানির জন্য একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগ রয়েছে। এভাবে আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বাড়ছে।

বক্তারা বলেন, আইনি কাঠামো থাকার ফলে ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ের জনগণ তাদের মধ্যে সংঘটিত আপসযোগ্য বিরোধ আদালতে না গিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে গ্রাম আদালত ও পৌর বিরোধ

মীমাংসা বোর্ডের মাধ্যমে স্বল্প খরচে এবং হয়রানিমুক্ত পরিবেশে মীমাংসার সুযোগ পান। ফলে স্থানীয়ভাবে জনসাধারণের ন্যায়বিচারে অভিগম্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু গ্রাম আদালতের আর্থিক এখতিয়ার তিন লাখ টাকায় উত্তীর্ণ হওয়ার পথে থাকলেও পৌর বোর্ড আইনে বিরোধ নিষ্পত্তির এখতিয়ার এখনও ২৫ হাজার টাকা। ফলে পৌরবাসী এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সেমিনারে বক্তারা আরও বলেন, নগরায়ণের ফলে জনবসতির ঘনত্ব বেশি হওয়ায় নগরবাসীদের মধ্যে অপরাধ ও বিরোধ সংগঠনের প্রবণতা বেশি। আনুষ্ঠানিক আদালতে সালিশযোগ্য ও আপসযোগ্য মামলা নিষ্পত্তির জন্য কমপক্ষে দুই বছরের অধিক সময় অপেক্ষা করতে হয়। আবার এই ধরনের ছোট-খাটো বিরোধ বা মামলা থেকেই জš§ নেয় বড় বিরোধ। ফলে মামলার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এমনকি প্রতিপক্ষকে হয়রানির জন্য একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগও রয়েছে। এভাবে আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের আদালতগুলোয় ৪২ লাখ মামলা বিচারাধীন।

আলোচনায় মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, মেট্রোপলিটন এলাকায় এই মামলার জট তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। আমাদের দেশে ৯৪ হাজার ৪৪৪ জনের বিপরীতে বিচারকের সংখ্যা একজন। একজন বিচারকের বিপরীতে মামলার সংখ্যা প্রায় এক হাজার ৮৮৩টি। ফলে আদালতে সালিশযোগ্য ও আপসযোগ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হওয়ায় বিচারপ্রার্থীদের আর্থিক ক্ষতি, হয়রানি ও বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পৌরসভার নাগরিকদের একই সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। আমরা মনে করি, পৌরসভার আওতায় পৌর বোর্ড গঠন করে বিকল্প পন্থায় আপসযোগ্য বিরোধসমূহ নিষ্পত্তি করতে পারলে প্রাতিষ্ঠানিক আদালতের মামলার জট কমবে, জনসাধারণের ভোগান্তি কমবে এবং সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা হবে।

এ সময় আয়োজকদের পক্ষ থেকে আইনটি সংস্কারে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছেÑপৌর বোর্ড আইনে বিচারিক ক্ষমতার আর্থিক এখতিয়ার ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো; রায় বাস্তবায়ন পদ্ধতি সহজতর করা; আইনটির শিরোনাম পরিবর্তন করে পৌর আদালত নামে আইনটি তৈরি করা; বোর্ড পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের (পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, গণ্যমান্য ব্যক্তি) প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের দক্ষ করে আইনটি পরিচালনা করা; মেয়রের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে আপত্তি উপস্থাপন বা মেয়রের অনুপস্থিতিতে কে বোর্ডের দায়িত্ব পালন করবেন, তা স্পষ্ট করা; অতি দ্রুত বিধিমালা প্রণয়ন করা প্রভৃতি।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র ও মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল খালিদ হোসেন ইয়াদ, দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন-বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না, পঞ্চগড় পৌরসভা মেয়র জাকিয়া খাতুন প্রমুখ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০