নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালায় তামাক-সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে লাল শ্রেণির পরিবর্তে তুলনামূলভাবে কম ক্ষতিকর কমলা শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে তামাকের ক্ষতি সম্বন্ধে একটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে এবং কোম্পানিগুলো অধিকতর ব্যবসায়িক সুবিধা গ্রহণের সুযোগ পাবে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ পুনরায় সংশোধন করে তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় লাল তালিকাভুক্ত করা জরুরি।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসকে কেন্দ্র করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট (বাটা) তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আকরম খাঁ হলে অনুষ্ঠিত একটি সভায় বক্তারা এ দাবি জানান।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) নির্বাহী সভাপতি ও বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ‘তামাক কারখানায়: পরিবেশ আইন প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সহ-সাধারণ সম্পাদক এমএ ওয়াহেদ রাসেলের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমান। সভায় সš§ানিত আলোচক ছিলেন তামাকবিরোধী নারী জোটের আহ্বায়ক ফরিদা আখতার, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসির (বিএনটিটিপি) সচিবালয় ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩-এ তামাক কোম্পানিকে লাল শ্রেণি থেকে সরিয়ে এনে কমলা শ্রেণিভুক্তকরণ তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃঢ়প্রত্যয় এবং নানাবিধ ইতিবাচক পদক্ষেপকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে পরিবেশ দূষণকারী একটি তামাক কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণ করে চলেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তামাক কোম্পানিগুলোকে শহরের মাঝখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কারখানার জায়গাগুলোয় গড়ে তোলা হচ্ছে স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য সরকারের যখন এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, সে মুহূর্তে তামাক কোম্পানিকে এ ধরনের ছাড় দেয়ার পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় তামাককে পুনরায় ‘লাল’ শ্রেণির তালিকায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।
ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, তামাক কারখানাগুলো লাল থেকে কমলা শ্রেণিতে নিয়ে আসার জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার পাশাপাশি ফসলি জমিতে তামাক চাষ নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনকারীদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়ে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় রোডম্যাপ প্রণয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
ফরিদা আখতার বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো দীর্ঘমেয়াদে ভোক্তা তৈরি করার জন্য শিশু এবং তরুণদের টার্গেট করছে। জর্দা গুলসহ সব ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য তৈরির কারখানা স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই সহজ শর্তে উদ্যেক্তাদের সুযোগ করে দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তামাক কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সরকারকে এসব দিকে নজর দিতে হবে।
হেলাল আহমেদ বলেন, তামাক চাষ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তামাক চাষের জমিগুলোতে পরিবেশ কর আরোপ করা প্রয়োজন। তিনি বিগত দিনে তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের ইতিবাচক ভূমিকাগুলোর প্রশংসা করে এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করেন। সর্বোপরি তিনি সরকারের কাছে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি দ্রুত সংশোধনের মাধ্যমে শক্তিশালী করার দাবি জানান।
হামিদুল ইসলাম হিল্লোল বলেন, একটি কল্যাণ রাষ্ট্র জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের উল্টোদিকে হাঁটছে সরকার। প্রতি বছর প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ তামাকজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করে যা কভিডে আক্রান্ত মৃত্যু সংখ্যার প্রায় ১৩ গুণ। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রত্যয় বাস্তবায়নের পরিবর্তে সরকারের এ মন্ত্রণালয়টি কেন লাল থেকে কমলা শ্রেণিতে নিয়ে এলো সেটি ভাবনার বিষয়। বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে বর্তমান মন্ত্রী মহোদয় তামাক উৎপাদনকারী কারখানাকে আবার লাল তালিকায় ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।