উৎপাদন খরচ বাড়ায় ফরিদপুরে পাট চাষে আগ্রহ কমছে

প্রতিনিধি, ফরিদপুর: বৃহত্তম পাট উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ফরিদপুর জেলায় চলতি বছরে পাট উৎপাদনের খচর বাড়ছে বলে দাবি চাষিদের। খরা ও পাট উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত উপকরণ ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণেই এ বছর উৎপাদন খরচ স্থান ভেদে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন চাষিরা। এদিকে বিগত বছরগুলোয় পাটের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় জেলায় পাট আবাদে আগ্রহ কমছে চাষিদের। যার ফলে পূরণ হয়নি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা। যদিও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর খরার কারণে পাটের বাড়ন্ততা প্রথম দিকে কিছুটা কম হলেও সম্প্রতি বৃষ্টি হওয়ায় সেই সমস্যা কেটে গেছে।

স্থানীয় চাষিদের দাবি, প্রাকৃতিক পানি ও বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করেই এ অঞ্চলের চাষিরা, পাটের আবাদ করে থাকেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সময় মতো বৃষ্টিপাত না হওয়া ও মৌসুমজুড়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বিপাকে পড়তে হয়েছে চাষিদের। সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অতিরিক্ত সেচ দেয়ায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় প্রয়োজন মতো পানিতে পাট পচাতে না পারায় মান নিম্নগামী হয়ে যায়; এতে কাক্সিক্ষত মূল্য না পেয়ে হতাশ তারা।

ফলে এ বছর পাট আবাদে আগ্রহ কিছুটা কমেছে চাষিদের।

ফরিদপুর জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে এ বছর জেলা জুড়ে ৮৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও আবাদ হয়েছে ৮৬ হাজার ৫২৪ হেক্টর জমিতে। জেলায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ কমে যাওয়ায় উৎপাদনও স্বাভাবিকভাবেই কম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ বছর আবাদ হওয়া জমি থেকে দুই লাখ ১৮

হাজার ৯০৫ মেট্রিক টন পাট উৎপাদনের আশা কৃষি বিভাগের।

বোয়ালমারী উপজেলা সাতৈর গ্রামের পাটচাষি মো. রেজাউল করিম, হাটখোলার চরের নুরুল ইসলাম মৃধাসহ কয়েকজন চাষি দাবি করেন, এ বছরও অনাবৃষ্টির কারণে সেচ দিতে হয়েছে; যা প্রতি ৩০ শতাংশে অতিরিক্ত ৮০০ টাকা খরচ করতে হয়েছে তাদের (চাষি)। এছাড়া ৫০০ টাকার দৈনন্দিন শ্রমিক অতিরিক্ত ৩০০ টাকা বেশিতে ৮০০ টাকায় এবং সার ওষুধসহ অন্যান্য উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এ বছর বিগত বছরের চেয়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ খরচ বাড়বে।

তারা দাবি করেন, এ বছরও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় আগামীতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত বা বন্যা না হলে প্রাকৃতিক পানি পাওয়া দুষ্কর হতে পারে। এতে পাটের পচন প্রক্রিয়ার কর্মাদি সম্পন্ন করতে দূরের জলাশয়ে নিতে পরিবহন এবং শ্রমিকের খরচ বৃদ্ধি পাবে। তথাপিও বহমান পানিতে পাট পচাতে না পারলে মানও ধরে রাখা কষ্টকর হবে। ফলে পাটের মান ধরে রাখতে না পারলে কাক্সিক্ষত মূল্যও পাওয়া যাবে না। তাদের দাবি এ বছর গড়ে পাটের মণপ্রতি উৎপাদন খরচ তিন হাজার টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

জেলার কৃষকদের দাবি, এ বছর পাটের মূল্য প্রকারভেদে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা না পেলে বিপাকে পড়তে হবে তাদের। আর ন্যায্যমূল্য না পেলে পাটের আবাদ থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। যার প্রভাব পড়বে আগামীতে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বৃষ্টি না থাকায় দুশ্চিন্তা থাকলেও সম্প্রতিকালে বৃষ্টি হওয়ায় শঙ্কা কেটে গেছে। বৃষ্টি পানি পাওয়ার পর থেকে পাটের গ্রোথ বেড়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। তিনি জানান, কৃষি কর্মকর্তারা ছ্যানা পোকা লাগাসহ যেকোনো সমস্যায় চাষিদের উত্তরণের পরামর্শ দিয়ে পাশে রয়েছেন। তিনি দাবি করেন, আবহাওয়া ঠিকঠাক থাকলে ফরিদপুর জেলায় আবাদ করা পাটের গড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা (হেক্টর প্রতি দুই দশমিক ৫৩ টন) ঠিক থাকবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০