শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, গবেষক ও ভাষাবিজ্ঞানী মুহম্মদ আবদুল হাইর মৃত্যুদিবস আজ। তিনি ১৯১৯ সালের ২৬ নভেম্বর মুর্শিদাবাদের রাণীনগর থানার মরিচা গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। তারা বাবা আব্দুল গণি ও মা ময়মুন্নেসা খাতুন। মুহম্মদ আবদুল হাই ১৯৩৬ সালে হাই মাদ্রাসা এবং ১৯৩৮ সালে ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪১ সালে বাংলায় বিএ অনার্স এবং ১৯৪২ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর তিনিই ছিলেন বাংলা বিভাগের প্রথম মুসলমান ছাত্র। মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের কর্মজীবন শুরু হয় ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে। তিনি ১৯৪২ সালে বাংলার লেকচারার পদে বেঙ্গল জুনিয়ার এডুকেশন সার্ভিসে যোগ দেন। একই পদে তিনি ১৯৪৩ সালে কৃষ্ণনগর কলেজ, ১৯৪৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাজশাহী সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে তিনি নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের পর শাসকশ্রেণির বিরূপ মনোভাবের কারণে বাংলাভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংকটের মধ্যে পড়ে। সংস্কৃতির এ দুর্দিনে দৃঢ়চিত্ত আবদুল হাই পেশাগত দায়িত্ব ও নৈতিক অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে চলেন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিভাগে ফিরে এসে প্রথমে তিনি যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বাংলা বিভাগকে পুনর্গঠিত করেন। তার আগ্রহে সৈয়দ আলী আহসান, মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আহমদ শরীফ, আনিসুজ্জামান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রমুখ কৃতিমান শিক্ষক বাংলা বিভাগে যোগ দেন। মুহম্মদ আবদুল হাই ১৯৫৪ সালে বাংলা বিভাগের রিডার ও অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। গবেষণার ক্ষেত্র প্রস্তুত ও প্রসারের লক্ষ্যে তিনি সাহিত্য পত্রিকা (১৯৫৭) প্রকাশ করেন। উচ্চমানের জন্য খুব দ্রুত পত্রিকাটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করে। আবদুল হাই এ পত্রিকাটি সম্পাদনার পাশাপাশি নিরলস নিজের গবেষণাও চালিয়ে যান। প্রকাশিত হয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি, বিলেতে সাড়ে সাতশ’ দিন, তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষা, ভাষা ও সাহিত্য, ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব প্রভৃতি গ্রন্থ। পাঠ্যপুস্তকের অভাব দূর করার জন্য মুহম্মদ আবদুল হাই সৈয়দ আলী আহসানের সঙ্গে যৌথভাবে রচনা করেন বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত (আধুনিক যুগ)। ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে তিনি ১০ মাস মেয়াদে ১৯৬৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার মিজোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করেন। ১৯৬৯ সালের ৩ জুন ঢাকায় তার মৃত্যু হয়। [সংগৃহীত]
