দুর্বার গতিতে বাড়ছে জনপ্রশাসন ব্যয়

মো. মাসুম বিল্লাহ: একসময় বাজেটের সর্বোচ্চ ব্যয়ের খাত ছিল শিক্ষা খাত। সব সরকারই শিক্ষা খাতে বেশি বরাদ্দ দিয়ে একটু বাহবা নেয়ার চেষ্টা করত। এ খাতে বরাদ্দ বেশি দেয়ার মূল লক্ষ্যই ছিল সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে অগ্রগতির ধারায় প্রবাহিত করা। মোটামুটি ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত এ ধারা চলতে দেখা যায়। এর পর থেকে দেখা মেলে অন্য চিত্র। ২০১৮-১৯ অর্থবছর বাজেট বরাদ্দে শিক্ষা খাতকে ছাড়িয়ে যায় জনপ্রশাসন খাত। আর তখন থেকে এ খাতই ব্যয়ের সর্বোচ্চ খাতের স্থান দখল করে আছে। আগামী অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেটেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এ বরাদ্দের সবচেয়ে বড় অংশ ব্যয় হবে জনপ্রশাসন খাতে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই লাখ ৯৭ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ২২ দশমিক এক শতাংশ। গত অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল দুই লাখ ৭০ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। এটি ছিল ওই অর্থবছরের মোট বাজেটের ২২ শতাংশ।

গত ৯ বছরের বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে জনপ্রশাসনে বরাদ্দ ছিল বাজেটের ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ। ওই অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল বাজেটের ১৫ দশমিক ছয় শতাংশ। এর পরের অর্থবছর জনপ্রশাসনের বরাদ্দ ছিল ১৩ দশমিক ছয় শতাংশ। ওই অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১৬ দশমিক চার শতাংশ। মূলত এর পরের অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে শিক্ষা খাতের বরাদ্দকে ছাড়িয়ে যায় জনপ্রশাসনের বরাদ্দ। ওই অর্থবছরে জনপ্রশাসন খাতের বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ শতাংশ এবং শিক্ষায় বরাদ্দ হ্রাস পেয়ে হয় ১৪ দশমিক ছয় শতাংশ। এর পর আর কখনও শিক্ষা খাতের বরাদ্দ জনপ্রশাসনের বরাদ্দকে টপকাতে পারেনি। ওই সময় থেকে হু-হু করে বাড়ছে জনপ্রশাসনের বরাদ্দ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক পাঁচ শতাংশ। আর শিক্ষায় বরাদ্দ দেয়া হয় ১৫ দশমিক দুই শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে জনপ্রশাসনে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ। ওই সময় শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১৫ দশমিক এক শতাংশ। এর পরের অর্থবছরও জনপ্রশাসনে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের প্রায় ১৯ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জনপ্রশাসনে বরাদ্দ দাঁড়ায় প্রায় শতাংশে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ২২ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটেও ২২ শতাংশের ওপরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে জনপ্রশাসনে।

এদিকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দিয়ে জনপ্রশাসন খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টিকে সরকারের ফিসক্যাল নীতির দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন নীতিবিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, বর্তমানে দেশে এক ধরনের আর্থিক সংকট চলমান। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত ছিল জনপ্রশাসন খাতে সংকোচনের নীতি গ্রহণ করা। তা না করে এ খাতেই বরাদ্দের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়ানো হয়েছে। এ বরাদ্দের বড় অংশই ব্যয় হয় রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা সুবিধা প্রদানের জন্য। এ ব্যয় হলেও নাগরিক সেবার মানোন্নয়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য শেয়ার বিজকে বলেন, মূলত যে উদ্দেশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তা হচ্ছে সেবার মান বৃদ্ধি করা। কিন্তু বাস্তবে তেমনটি হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও আনুতোষিক বৃদ্ধি নেতিবাচক কোনো বিষয় নয়। কিন্তু তাদের জবাবদিহিতে ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে তাদের জবাবদিহির মধ্যে রাখার জন্য যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দরকার ছিল, সেটি দুর্বল হয়ে গেছে। এর ফলে যে উদ্দেশ্যে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে, সে উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সঠিক গণতন্ত্রচর্চা নিশ্চিতের পাশাপাশি নির্বাচন ব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০