রাঙামাটির বাজারে রসাল লিচু, আড়তে ব্যস্ততা

প্রতিনিধি, রাঙামাটি: রাঙামাটি শহরের বনরুপা সমতাঘাট। লিচু নিয়ে ভোর হতেই একের পর এক যন্ত্রচালিত বোট ভিড়ছে রাঙামাটি শহরের ব্যস্ততম এই ঘাটে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন বাগান থেকে লিচু নিয়ে আসছেন বাগানিরা। বোট ভিড়তেই ঘাটে অপেক্ষমাণ ব্যবসায়ীরা উঠে কিনে নিচ্ছেন লিচু। এটি এখন রোজকার চিত্র রাঙামাটির সমতাঘাটে।

রাঙামাটির বাজার এখন মৌসুমি সুস্বাদু ফল লিচুতে সয়লাব। এবার রাঙামাটিতে লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। কীটনাশক মুক্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলায় রাঙামাটির লিচুর চাহিদাও ভালো। প্রতিদিনই ঘাট ও বাজারে আনা হচ্ছে বোটে বোটে লিচু। লিচুর আকার ও রঙের ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হচ্ছে দাম। চাষিরাও লিচুর ভালো দাম পাচ্ছেন।  এদিকে কৃষকের উৎপাদন ও আয় ঠিক রাখতে উন্নত এবং দেশি জাতের মিশ্র লিচু চাষে বাগানিদের উৎসাহ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

লিচুর আকার ও রঙের ওপর নির্ভর করেই হাঁকা হচ্ছে দাম। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের দর কষাকষি শেষে নামানো হচ্ছে ঘাটে। সেখানেই শ্রমিকরা কার্টনে প্যাকেট করছেন লিচু। আবার কিছু ব্যবসায়ী ঘাট থেকে কিনেই বাজারে বসে বিক্রি করছেন লিচু। আকার ও রংভেদে ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকায় পর্যন্ত। দাম ভালো পাওয়ায় খুশি চাষিরাও।

বন্দুকভাঙা ইউনিয়নের লিচু চাষি সুকমল চাকমা। তিনি বলেন, আমি চায়না থ্রি, দেশি ও বোম্বাইয়া লিচু নিয়ে এসেছি। বাজারের অবস্থা বেশ ভালো, ভালো দামে বিক্রি করেছি।

আরেক চাষি থাইচোয়াই মারমা বলেন, এ বছর আমাদের লিচুর ফলন বেশ ভালো হয়েছে। রাঙামাটির বাইরে থেকে অনেক পাইকারি ক্রেতা এসে কিনে নিচ্ছে। আমরাও বেশ ভালো দামে বিক্রি করছি।

মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী বাপ্পী বড়ুয়া বলেন, আমি দেশি, চায়না থ্রি আর বোম্বাইয়া লিচু কিনেছি। ফলন ভালো হওয়াতে বাগানিরা দামটা একটু বেশি চাচ্ছে। প্রতি ১০০লিচু এখানে থেকে কিনে নিয়ে যেতে আমাদের ৩০-৪০ টাকা খরচ হচ্ছে।

আরেক ব্যবসায়ী মিত্র চাকমা বলেন, এবার বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা দুটোই বেশি। অনেকেই এখন মৌসুমি ফল বিক্রি শুরু করেছেন। বিক্রেতারা দাম বেশি চাচ্ছেন, তাই অনেক ব্যবসায়ীকে পরিমাণে কম কিনতে হচ্ছে। কারণ লিচুর পরিবহন খরচ বেশি। পাশাপাশি গরমের কারণে লিচু ঝড়ে যাচ্ছে।

শহরের সবচেয়ে বড় খুচরা ফলের বাজার কলেজগেট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নানা আকারের লিচুর পসরা সাজিয়ে বসেছেন খুচরা বিক্রেতারা। বিক্রেতা মহসিন মিয়া বলেন, আমরা পাইকারি ৫০টি লিচু কিনি ১০০ টাকায়, বিক্রি করছি ১২০-১৩০ টাকায়। দেশি লিচুর চেয়ে চায়না থ্রি, টু লিচুর চাহিদা বেশি।

আরেক বিক্রেতা শহীদুজ্জামান বলেন, যেসব লিচু বাগানে ভালোভাবে পরিচর্যা করা হয়েছে, সেসব লিচু দেখতে এবং সাইজে ভালো, তাই এগুলোর দাম একটু বেশি। আপাতত বাজারে দেশি লিচুর চেয়ে চায়না থ্রি লিচুর চাহিদা বেশি। বাজারে ক্রেতাও ভালো।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এ বছর রাঙামাটিতে ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। গত বছর ফলন ভালো থাকলেও এ বছর কিছুটা কম হয়েছে। গত বছর আমাদের ফলন ছিল প্রায় ১৭ হাজার মেট্রিক টন, এ বছর ফলন হয়েছে ১৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টনের মতো। কিন্তু বাজারে বেশ ভালো লিচু উঠেছে, বিক্রেতারাও ভালো দাম পাচ্ছেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০