আজমিরীগঞ্জে তীব্র হচ্ছে ভাঙন আতঙ্কে গ্রামবাসী

প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ: ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে চলা কুশিয়ারা নদীর পাড়ের মানুষ। বর্ষার আগেই পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টির কারণে হু হু করে পানি বাড়ছে নদীতে। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, দিনের পর দিন এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা। কয়েক বছর ধরে চলা নদীর ভাঙনে এরই মধ্যে বিলীন হয়েছে তাদের অনেকেরই সহায়-সম্বল। বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন বহু বাসিন্দা। অল্প বিস্তর যা অবশিষ্ট আছে, তা হারানোর ভয়ে আছেন অনেকেই। তাদের অভিযোগ, ভাঙন ঠেকাতে টেকসই পদক্ষেপ না নেয়ায় এই ভোগান্তি কমছে না। যেসব কাজ করা হয় সেখানেও থাকে অনিয়ম; যা মানুষের দুর্ভোগ বাড়ায়। ভাঙন শুরু হলেই কিছু জিও ব্যাগ ফেলে নিজের দায়িত্ব সারেন সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার কুশিয়ারা পাড়ে দেখা যায়, কালনী-কুশিয়ারা নদীর ভাঙন প্রতিদিন বাড়ছে। কাকাইলছেও ইউনিয়নের মনিপুর, সৌলরী, কালনীপাড়ার কয়েকটি বসতঘর যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে বিপাকে পড়েছেন অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষ। ভাঙনকবলিত অনেকে আত্মীয়স্বজন ও সরকারি পতিত জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া বদরপুরসহ আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের লোকজন ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, গত এক মাসে বদরপুর গ্রামের সামরিক মিয়ার বাড়ির মতো নদীতে ভিটাবাড়ি হারিয়েছেন সুজিত, অবিনাশ, অধীর, অশ্বীনি, দীপঙ্কর, মনোরঞ্জন, অরিবৃন্দ, নীলকান্ত, মতিন্ড, যামিনী, রমাকান্ত, গৌতম, সুশেন, লবু ও ভূষেনসহ অন্তত ৩০ জনের পরিবার।

বদরপুর গ্রামের বাসিন্দা শোভা রানী সূত্রধর জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন ছেলে, ছেলের বউ আর নাতি-নাতনিদের নিয়ে স্বামীর ভিটাতে বাস করছেন। কয়েক বছর ধরে বাড়ির পেছন দিকে বয়ে চলা নদীতে শুরু হয়েছে ভাঙন। এরই মধ্যে তার ভিটার এক তৃতীয়াংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সম্প্রতি নদীর পানি বেড়ে যাওয়া ও বৃষ্টিতে অবশিষ্ট জায়গাটুকুতেও হানা দিয়েছে আগ্রাসী কুশিয়ারা। সর্বশেষ ঠাঁইটুকু হারিয়ে ফেলার আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে তার পরিবারকে।

নদী তীরবর্তী বাসিন্দা রবিন্দ্র সূত্রধর জানান, নদীর ভাঙন ভাঙন খেলায় ক্লান্ত তারা। সব হারিয়ে পথে বসার উপক্রম। অথচ এই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য টেকসই কোনো পরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের মাথা ব্যথাই নেই। কর্তৃপক্ষ যদি টেকসই সমাধান দিত তা হলে এমনটা হতো না। মুজিবুর মিয়া নামে আরকজন জানান, বছর দেড়েক আগে কিছু কিছু ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তবে সেগুলো ভাঙনের মূল জায়গায় না ফেলে দূরবর্তী স্থানে ফেলায় নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও শুরু হয়েছে ভাঙন। মানুষের জীবনমরণ যেখানে অনিশ্চয়তার মুখে, সেখানেও অনিয়ম চলে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল ভৌমিক জানান, শিগগিরই তিনি ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। দ্রুতই ভাঙন ঠেকাতে কাজ শুরু হবে।

হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ জানান, ভাঙনের বিষয়ে তারা অবগত। এরই মধ্যে এ ব্যাপারে তৎপরতা শুরু হয়েছেই। দ্রুতই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০