নিজস্ব প্রতিবেদক: ১০ টাকা ভ্যাট আদায়ের আড়ালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৯০ টাকা ঘুস নেয় বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এমন অভিযোগ করে এনবিআরকে এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
সেই সঙ্গে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত করার আগে ১৫টি দাবি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে বাজুস। এই দাবি পুনর্বিবেচনা না করা হলে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বন্ধ করে দেবেন বলে হুমকি দেয়া হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে গতকাল রোববার বাজুস কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এনবিআরের বিরুদ্ধে ঘুসের অভিযোগ করে বাজুস তাদের দাবি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানায়।
বাজুসের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান ও কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন। এ সময় বাজুসের মুখপাত্র ডা. দিলীপ কুমার রায়, উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল এবং বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের সদস্য সচিব ও কার্যনির্বাহী সদস্য পবন কুমার আগরওয়াল উপস্থিত ছিলেন।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাজুসের পক্ষ থেকে আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে আমাদের বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। গত কয়েকটি বছরের প্রাক-বাজেটে বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান বাজুসের দাবি পূরণের অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘জুয়েলারি শিল্পে যখন নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার উৎসাহ প্রদান করছে বাজুস, তখন এনবিআর নীতিসহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসছে না। পাশাপাশি সারাদেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের নামে হয়রানি করছে। ১০ টাকা ভ্যাট আদায়ের আড়ালে ৯০ টাকা ঘুস নেয়ার সংস্কৃতি থেকে এনবিআরকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
এনবিআরের বিরুদ্ধে ১০ টাকা ভ্যাট আদায়ের আড়ালে ৯০ টাকা ঘুস নেয়া সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা অনেক কথা বলি, অনেক কথা বলতে পারি না বাধ্য হয়ে। এখন আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এ জন্য আমরা এই সত্য কথা (এনবিআর ঘুস নেয়) সোজা করে বলার চেষ্টা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে সোনা, স্বর্ণালংকার, রুপা বা রুপার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে ভ্যাট হার পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে তিন শতাংশ করাসহ মোট ১৫টি দাবি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে বাজুস। সোনার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে ভ্যাট হার পাঁচ শতাংশের পরিবর্তে তিন শতাংশে নামিয়ে আনলে সরকার প্রতি বছর প্রায় এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে পারবে বলে জানিয়েছে বাজুস। সংগঠনটির অন্য দাবির মধ্যে রয়েছেÑইএফডি মেশিন যত দ্রুত সম্ভব নিবন্ধিত জুয়েলারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণ করতে হবে; আংশিক পরিশোধিত সোনার ক্ষেত্রে সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসিধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্ক হার পাঁচ শতাংশ করা; সোনা পরিশোধনাগার শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সোনার বর্জ্য ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত শুল্ক হার সিডি (কাস্টম ডিউটি) পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ করা। সেই সঙ্গে বর্তমানে বলবৎ থাকা ১৫ শতাংশ ভ্যাট, পাঁচ শতাংশ এটি (অ্যাডভান্স ট্যাক্স) এবং ৫ শতাংশ এআইটি (অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স) রহিত করা; সোনা পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ প্রদান; সোনার অলংকার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানি করা কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ক কর অব্যাহতি প্রদানসহ ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে প্রদান; বৈধভাবে সোনার বার, সোনার অলংকার, সোনার কয়েন রপ্তানিতে উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করার শর্তে রপ্তানিকারকদের মোট ভ্যালু অ্যাডিশনের ৫০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা দেয়া; এইচ এস কোর্ডভিত্তিক অস্বাভাবিক শুল্ক হার হ্রাস করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে শুল্ক হার সমন্বয়সহ এসআরও সুবিধা দেয়া প্রভৃতি।