বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যয়ে বড় অংশের জোগান দেয় উন্নয়ন সহযোগী তথা বিদেশি ঋণ সহায়তা। এ ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে সরকারের ব্যয় এখন ক্রমেই বাড়ছে। সামনের দিনগুলোয় বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এ অবস্থায় ‘তিন বছরে সুদ পরিশোধ ব্যয় ছাড়াবে দেড় লাখ কোটি টাকা’ শীর্ষক শিরোনামে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, সেটি সরকারের জন্য অস্বস্তি বাড়াবে বলেই ধারণা।
আমাদের প্রতিবেদক জানান, ‘প্রতিবছরই জাতীয় বাজেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাজেট ঘাটতি। সে ঘাটতি মেটাতে দেশীয় উৎস তথা ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে নিয়মিত ঋণ নিচ্ছে সরকার। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশি ঋণ নেয়ার পরিমাণও বাড়ছে। তবে ঋণের পরিমাণ দ্রুত বাড়তে থাকায় এর সুদ পরিশোধ এখন সরকারের জন্য বোঝা হয়ে উঠেছে। চলতি অর্থবছর বাজেটের ১২ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থ যাচ্ছে সুদ পরিশোধে। তবে তিন বছর পর ২০২৬-২৭ অর্থবছর এ খরচ অনেকটা বেড়ে যাবে। ওই অর্থবছর সুদ পরিশোধে বাজেটের ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। অর্থ বিভাগের প্রকাশিত ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি: ২০২৪-২৫ হতে ২০২৬-২৭’ শীর্ষক প্রকাশনায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সহায়ক প্রকাশনা হিসেবে এটি গত ৬ জুন প্রকাশ করা হয়েছে।
দেশে রেমিট্যান্স ও রপ্তানিসহ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে আমদানি দায় ও ঋণ পরিশোধে ব্যয় হচ্ছে বেশি। ফলে নিম্নমুখিতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন প্রকল্পে নেয়া ঋণের অর্থ পরিশোধের চাপ গত কয়েক বছরে বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল ও বঙ্গবন্ধু ট্যানেলের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর ঋণ পরিশোধ শুরু হলে এ চাপ আরও অনেক জোরালো হয়ে উঠবে। তাই ঋণের সুদ ও শর্তের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য শেয়ার বিজকে বলেন, সুদ পরিশোধ এখন পরিচালন বাজেটের প্রায় এক-চতুর্থাংশ অর্থ নিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া ভর্তুকিতেও বড় অর্থ ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু ভর্তুকি ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে। সুদ ও ভর্তুকিতেই যদি বাজেটের বড় অংশ চলে যায়, তাহলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের মতো খাতে অর্থের জোগান বাড়ানো কঠিন হবে। এমন পরিস্থিতিতে সুদ ব্যবস্থাপনায় নজর দেয়া আবশ্যক।
আমরা মনে করি, ‘বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নেয়ার প্রয়োজন আছে। বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতা কীভাবে কমানো যায়, সে চেষ্টা করতে হবে। পরিশোধের ক্ষেত্রে কিস্তি পুনঃতফসিলকরণের জন্য বাংলাদেশকে কখনও আবেদন করার প্রয়োজন হয়নি। তবুও কঠিন শর্তের ঋণের ঝুঁকি প্রশমনে ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট প্র্যাকটিসের সঙ্গে সংগতি রেখে ঋণের নমনীয়তা পরীক্ষা ও অনুমোদনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’