উদ্যোক্তারাও নিমগ্ন হন ধ্যানচর্চায়

সিদ্ধার্থ গোস্বামী: বাংলাদেশে আইসিটি খাত উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি করছে। ইউএনডিপি ও বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আইসিটি খাতে প্রায় তিন লাখ আইটি পেশাদার নিয়োগ পায় এবং শিল্পটি প্রতি বছর প্রায় ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি নির্দেশ করে, প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার নতুন পেশাদার এই সেক্টরে প্রবেশ করছে। অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের সঙ্গেই বলতে হয়, ফ্রিল্যান্সিং আয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সারা বিশ্বের মধ্যে অষ্টম এবং প্রবৃদ্ধি ২৬ শতাংশ। তরুণরা, বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা এই সেক্টরের বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া আইসিটি ডিভিশনের নানা প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্যোক্তা এবং স্টার্টআপদের জন্য কার্যক্রম চলমান আছে, যেখানে বাংলাদেশের তরুণরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

নবীন উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। কিছু প্রধান চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে মূলধনের অভাব, বাজার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অভাব, প্রযুক্তিগত দক্ষতার ঘাটতি, পর্যাপ্ত নেটওয়ার্কের অভাব এবং মানসিক চাপ ও স্বাস্থ্য সমস্যা। অধিকাংশ নবীন উদ্যোক্তা পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব অনুভব করে, যা তাদের ব্যবসা শুরু এবং পরিচালনার জন্য অপরিহার্য। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত নতুন ও ক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানে রক্ষণশীল থাকে। বাজার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অভাব অনেক সময় উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রাখে। প্রযুক্তিগত দক্ষতার ঘাটতি তাদের ব্যবসা পরিচালনায় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে এবং সঠিক নেটওয়ার্কের অভাবে ব্যবসায়িক সুযোগগুলো সীমাবদ্ধ হতে পারে। এছাড়া ব্যবসার শুরুতে নানা রকম চাপ, ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা নতুন উদ্যোক্তাদের মানসিক চাপ ও স্বাস্থ্য সমস্যায় ফেলতে পারে।

শুধু আইসিটি নয়, মেডিটেশন বা ধ্যানচর্চা যে কোনো উদ্যোক্তার জন্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে। এটি তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং কর্মক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জগুলো সামাল দিতে সহায়তা করে। কেননা মেডিটেশন চর্চায় মাথা ঠাণ্ডা থাকে এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়। তাছাড়া, মেডিটেশন মানসিক চাপ কমাতে এবং মনকে শিথিল করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এটি মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়াতে সহায়ক। আর মনোযোগ, একাগ্রতা ও অধ্যাবসায় ছাড়া এ সেক্টরে সফলতা লাভ করা সম্ভব নয়। এগুলো থাকলে উদ্যোক্তাদের কার্যকারিতা ও উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পায়।

নিয়মিত মেডিটেশন ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা আবেগিক বুদ্ধিমত্তা উন্নত করে, যা উদ্যোক্তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। ফলে অন্যদের সঙ্গে ভালোভাবে যোগাযোগ করা সহজ হয়। এই যোগাযোগ ফলপ্রসূ হওয়াটা খুব জরুরি। এছাড়া মেডিটেশন সৃজনশীল চিন্তা ও উদ্ভাবনী ধারণা বিকাশে সহায়ক হতে পারে। কারণ স্থির অবস্থাতেই মনে আসে নানা নতুন আইডিয়া, যা অস্থির অবস্থায় কখনোই আসে না। আর নিত্যনতুন আইডিয়া তাদের ব্যবসার প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে সাহায্য করে।

মেডিটেশন তরুণদের শুধু পেশাগত জীবনেই নয়, ব্যক্তিগত ও সামগ্রিক জীবনের বিভিন্ন দিকেও সহায়ক হতে পারে। ফ্রিল্যান্সারদের এখনও অনেক সামাজিক ও পারিবারিক চাপের মুখে পড়তে হয়। যেহেতু একজন উদ্যোক্তা কোনো প্রচলিত ফরম্যাটের চাকরিজীবী নন, সেহেতু নিজের পেশা সম্পর্কে অন্যকে বোঝাতে তার বেশ বেগ পেতে হয়। এমনকি নিজ ঘরেও সম্পর্কগুলো টিকিয়ে রাখা বা সুন্দর রাখার ক্ষেত্রেও বেশ ঝক্কি পোহাতে হয়। মেডিটেশন হতে পারে এক্ষেত্রে কার্যকর সমাধান। মনের ভেতর থেকে রাগ ক্ষোভ ঘৃণা দূর করে অন্যের জন্যে মমতা পোষণ করার দুরূহ কাজটি সম্ভব মেডিটেশন বা ধ্যানচর্চার মাধ্যমে।

তাই প্রতিদিন দুবেলা ধ্যানচর্চা যেকোনো তরুণ উদ্যোক্তা অর্থাৎ যাদের উদ্যোগের প্রথম দিকে গুরুত্বপূর্ণ নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাদের জন্য খুবই সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। সকালে কাজ শুরু করার আগে এবং সন্ধ্যায় কাজ শেষ করার পর বা কখনও কাজের ফাঁকে ধ্যানচর্চা করা যেতে পারে। প্রতিবার ২০-৩০ মিনিট ধ্যানচর্চা। নিয়মিত চর্চা করলে একজন তরুণ নিজেই বুঝতে পারবেন তার ভেতরে ক্রমেই ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো। নিত্যনতুন উদ্যোগ গ্রহণ তার জন্য হয়ে যাবে সহজ আর স্বতঃস্ফূর্ত।

হেড অব অপারেশন্স, আইসিটি ডিভিশন

ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ একাডেমি

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০