শেয়ার বিজ ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজায় টানা আট মাসের বেশি সময় ধরে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে প্রাণহানি হয়েছে ৩৭ হাজারের বেশি মানুষের। এই ইস্যুতে বিশ্বের অনেক দেশে কোমলপানীয় ব্র্যান্ড কোকাকোলা বয়কটের ডাক দেয়া হচ্ছে। সেই বয়কটের ডাক ছড়িয়ে পড়ল উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোয়। খবর: মরক্কো ওয়ার্ল্ড নিউজ।
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মরক্কোর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোকাকোলা ও পেপসি ব্র্যান্ডের কোমলপানীয় বয়কটের ডাক দেয়া হয়েছে। পবিত্র ঈদুল আজহা এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মরক্কোর সামাজিক মাধ্যমে কোকাকোলা ও পেপসি বয়কট করার ডাক উঠতে শুরু করেছে। গাজায় চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি এই কোম্পানিগুলোর সমর্থনের কথা উল্লেখ করে এই ডাক দেয়া হচ্ছে।
সাধারণত ছুটির সময়ে কোমল পানীয়ের ব্যবহার বেড়ে যায়। কিন্তু মরোক্কার নাগরিকদের এই আমেরিকান কোমল পানীয় জায়ান্ট থেকে দূরে থাকার জন্য মানুষকে অনুরোধ করছেন অ্যাক্টিভিস্টরা। এজন্য বয়কট কোকাকোলার (#ইড়ুপড়ঃঃঈড়পধঈড়ষধ) মতো হ্যাশট্যাগসহ সামাজিক মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন পোস্টে জোর দিয়ে বলা হচ্ছে, তাদের (কোকাকোলা) পণ্য ক্রয় করে গ্রাহকরা কার্যত তাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের রক্ত ??পান করছেন।
কেউ কেউ অবশ্য এসব কোমল পানীয়ের বদলে মরোক্কান পুদিনা চা ব্যবহারের জন্য যুক্তি দিচ্ছেন। তাদের দাবি, কোমল পানীয়ের বিকল্প হিসেবে এই চা ব্যবহার করা হলে তা হবে স্বাস্থ্যকর এবং একই সঙ্গে এটি স্থানীয় অর্থনীতির জন্যও ভালো হবে। কেউ কেউ অবশ্য কোমল পানীয়ের পরিবর্তে প্রাকৃতিক জুস বা মরক্কোর তৈরি পানীয় বেছে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
এদিকে কোকাকোলা ও পেপসির স্থানীয় কর্মীদের ওপর এ ধরনের বয়কটের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। মরোক্কান নাগরিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ কোমল পানীয় সেক্টরে কাজ করেন এবং এই পানীয় বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেলে তারা চাকরি হারাতে পারেন।
বয়কটের এসব আহ্বান বৃহত্তর ‘বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাংকশনস (বিডিএস) আন্দোলনের’ অংশ, যা অর্থনৈতিক পন্থায় ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়।
গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের মধ্যে কোকাকোলাকে বিশেষ করে পশ্চিম তীরের অ্যাটারোটে একটি কারখানা পরিচালনার জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের অধিকৃত এই ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ বলে বিবেচিত।
এর আগে ২০২২ সালে অ্যাক্টিভিস্টদের চাপে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড কোম্পানি জেনারেল মিলস অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অ্যাটারোট ছেড়ে চলে যায়। ফ্রেন্ডস অব আল-আকসা সংস্থা এখন কোকাকোলাকেও সে ধরনের পদক্ষেপ অনুসরণ করার জন্য চাপ দিচ্ছে। সংস্থাটি বলছে, কোকাকোলা পান করার মাধ্যমে আমরা ভোক্তা হিসেবে ফিলিস্তিনের অবৈধ দখলদারিত্বের বিষয়ে চোখ বন্ধ করে রাখছি।
এছাড়া বৈশ্বিকভাবে কোকাকোলা এবং পেপসি এরই মধ্যে একই ধরনের বয়কট প্রচারাভিযানের কারণে এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে তাদের অনুভূত অবস্থানের কারণে কিছু দেশে তাদের বিক্রি হ্রাস পেয়েছে। অন্য দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কেও কোকাকোলার বিক্রি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
গত বছরের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর বিশ্বজুড়ে পানীয়র বেশ কিছু ছোট ব্র্যান্ড জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে লেবাননে জাল্লৌল এবং জি কোলা স্থানীয়দের কাছে আরও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মিসরে স্পিরো স্পাথিস নামে একটি পানীয়র বিক্রি ৩৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
এছাড়া প্যালেস্টাইন কোলা নামে আরেকটি পানীয় বাজারে নিয়ে আসেন ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত সুইডিশ তিন ভাই। সময়োপযোগী ওই সিদ্ধান্তে পানীয়টি বাজারে আসার মাত্র দুই মাসের মধ্যে বিপুল লাভের মুখ দেখেন তারা। প্যালেস্টাইন কোলার চাহিদা এখন তুঙ্গে। বর্তমানে ইউরোপেও অনেক রেস্তোরাঁ মার্কিন মালিকানাধীন পণ্য এড়িয়ে চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত মে মাসে অন্তত ৪০ লাখ ক্যান প্যালেস্টাইন কোলা বিক্রি হয়েছে।
তাছাড়া বয়কট ট্রেন্ডের ফলে বিপাকে পড়েছে ম্যাকডোনাল্ডস, কেএফসি ও স্টারবাকসের মতো আমেরিকান জায়ান্ট ফুড চেইন। মুসলিম দেশগুলোসহ বিশ্বজুড়ে কমেছে তাদের বিক্রির পরিমাণ। গত বছরের শেষ দিকে বিশ্বব্যাপী বয়কটের ডাকে ১১ বিলিয়ন বা এক হাজার ১০০ কোটি ডলার লোকসানের পড়েছিল আন্তর্জাতিক কফি চেইন শপ স্টারবাকস।