নাফ নদীতে যুদ্ধ জাহাজের উপস্থিতি, ‘বেড়েছে’ গোলাগুলি

প্রতিনিধি, কক্সবাজার :কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীতে ওপারে মিয়ানমারের একটি যুদ্ধ জাহাজ দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ এখনও ভেসে আসছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘নাফ নদীতে একটি বড় জাহাজ দেখা গেছে এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাওয়ার বিষয়ে অবহিত রয়েছি। সতর্ক অবস্থানে রয়েছি আমরা।’

সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ‘বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাফ নদীর টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়ায় মিয়ানমারের কাছে জাহাজটি দেখা গিয়েছিল।’

এরপর রাত ৯টা থেকে এপারে ভেসে আসতে থাকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। টানা তিন ঘণ্টা ধরে সীমান্তের লোকজন ওই শব্দ শুনেছেন। তারপর থেমে থেমে রাতভর শোনা গেছে।’

তারা বলছেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত আবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

সকালের পর সেই ‘বড় জাহাজটি’ দক্ষিণ দিকে সরে গিয়ে বর্তমানে টেকনাফের নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা যাচ্ছে। আর সেই জাহাজ থেকে মিয়ানমারের স্থলভাগে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বর্ষণের শব্দ অব্যাহত রয়েছে।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, ‘গত এক মাস টেকনাফ সীমান্তের পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। কোনো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি। এর মধ্যে গত ৫ জুন, ৮ জুন এবং ১১ জুন নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমারের অংশ থেকে সেন্টমার্টিনগামী নৌযানে গুলি করা হয়।’

‘বুধবার দুপুরে নাফ নদীতে দেখা মেলে মিয়ানমারের নৌ-বাহিনীর জাহাজ। এরপর বুধবার রাত থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপসহ আশপাশের সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের ওপার হতে থেমে থেমে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসতে শুরু করে।’”

সালাম বলেন, ‘বিস্ফোরণের শব্দে সীমান্ত লাগোয়া শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট এলাকাসহ জালিয়াপাড়া, পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়া ও আচারবনিয়ার আশপাশের বসতঘর ও স্থাপনা কেঁপে ওঠে। এ সময় সীমান্তের একেবারে কাছাকাছি বসবাসকারীদের অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে কিছুটা দূরে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নেন।’

‘বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসার ঘটনা অব্যাহত থাকায় স্থানীয়দের অনেকে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। জাহাজটি এখন নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে রয়েছে। দুপুর ১টা পর্যন্ত গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, ‘শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাওয়ার বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জেনেছেন। জাহাজটি মিয়ানমারের অংশে রয়েছে।’

বর্তমান সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি ও কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টরা সজাগ রয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সংশ্লিষ্টদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা সাড়া দেননি।

কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্ট থেকে গুলি বর্ষণের ঘটনায় সাতদিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথ দিয়ে নৌযান চালাচল বন্ধ ছিল।

বুধবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের জরুরি এক বৈঠকে বৃহস্পতিবার থেকে বঙ্গোপসাগরের বিকল্প পথ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন এবং সীমিত আকারে যাত্রী আসা-যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

টেকনাফের ইউএনও আদনান চৌধুরী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটি ঘাট থেকে দুটি ট্রলার তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। ট্রলার দুটি টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমে গোলারখাল এলাকায় ভিড়বে।’

তবে গতকাল বেলা আড়াইটা পর্যন্ত পণ্যবাহী কোনো ট্রলার সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছাড়েনি বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে টেকনাফে গত এক সপ্তাহ ধরে আটকা পড়া অন্তত চার শতাধিক মানুষ সেন্টমার্টিনে ফেরার জন্য সাবরাং ইউনিয়নের মুন্ডার ডেইল এলাকার সাগর উপকূল পয়েন্টে ট্রলারের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০