ঢাকায় ৪৮ শতাংশের নিজস্ব বাসগৃহ নেই, জমি নেই ৫২ শতাংশের

ইসমাইল আলী: রাজধানী শহর ঢাকায় বসবাসকারীদের বড় অংশই ভাড়াটিয়া। নিজস্ব বাসাবাড়ি বা জমি নেই এমন জনগোষ্ঠীর সংখ্যাই এ শহরে বেশি। অনেকটা শহরের মতোই পুরো ঢাকা বিভাগের চিত্র। এ বিভাগে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেকের নিজস্ব বাসগৃহ নেই। আর নিজের এক খণ্ড জমি নেই তার চেয়েও বেশি জনগোষ্ঠীর। যদিও অন্যান্য বিভাগে এ চিত্র অনেকটা বিপরীত। অন্যান্য বিভাগে নিজস্ব বাসগৃহ ও জমির মালিকানাই বেশিরভাগ জনগোষ্ঠীর।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সম্প্রতি প্রকাশিত ‘আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপ ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২২ সালে বিবিএসের পরিচালিত ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, সারাদেশে ৭৭ দশমিক ০৭ শতাংশ খানায় (হাউজহোল্ড) বসবাসকারীর নিজস্ব বাসগৃহ রয়েছে। আর ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ ভাড়া বাসায় থাকে। তবে ভাড়া ছাড়া সরকারি খাসজমি বা উম্মুক্ত স্থানে (রেন্ট ফ্রি) বসবাস করে তিন দশমিক ৮৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী।

এদিকে দেশের খানাগুলোয় বসবাসকারীদের মধ্যে নিজস্ব জমি রয়েছে ৭১ দশমিক ১৪ শতাংশের। বাকিদের ২২ দশমিক ৫১ শতাংশ অন্যের জমিতে ঘর তুলে বাস করে, তিন দশমিক ৪১ শতাংশ অধিবাসী একাধিকজনের অবিভক্ত জমি তথা শেয়ারড ল্যান্ড এবং দুই দশমিক ৯৪ শতাংশ সরকারি খাসজমিতে বসবাস করে।

প্রতিবেদনের তথ্যমত, নিজস্ব জমি বা বাসগৃহ না থাকার হার শহর এলাকায় সবচেয়ে ভয়াবহ। শহরাঞ্চলে মাত্র ৫০ দশমিক ৬৬ শতাংশ খানায় বাসকারীদের নিজস্ব বাসগৃহ রয়েছে। বাকিদের মধ্যে ৪৪ দশমিক ২০ শতাংশ ভাড়া বাসায়, এক দশমিক ৭০ শতাংশ সাবলেট এবং তিন দশমিক ৪৪ শতাংশ ভাড়া ছাড়াই সরকারি খাসজমি বা উম্মুক্ত জায়গায় থাকে। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে ৯০ দশমিক ৭৩ শতাংশ খানায় বাসকারীদের বাসগৃহই নিজস্ব। বাকিদের মধ্যে মাত্র পাঁচ দশমিক ০৫ শতাংশ ভাড়া বাসায়, শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ সাবলেট এবং চার দশমিক ০৬ শতাংশ ভাড়া ছাড়াই সরকারি খাসজমি বা উš§ুক্ত জায়গায় থাকে।

এদিকে শহরাঞ্চলের খানাগুলোর মধ্যে মাত্র ৪৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ বসবাসকারীর নিজস্ব জমি রয়েছে। বাকিদের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ অন্যের জমিতে, তিন দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ারড ল্যান্ড এবং তিন দশমিক ৭৭ শতাংশ সরকারি খাসজমিতে থাকে। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে ৮৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ নিজস্ব জমিতে, ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ অন্যের জমিতে, তিন দশমিক ৩৭ শতাংশ শেয়ারড ল্যান্ড এবং দুই দশমিক ৫১ শতাংশ সরকারি খাসজমিতে থাকে।

বিবিএসের তথ্যমতে, সারাদেশের আটটি বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে কম নিজস্ব বাসগৃহ রয়েছে ঢাকা বিভাগের জনগোষ্ঠীর। এ বিভাগের ৫২ দশমিক ২৪ শতাংশ খানায় বসবাসকারীদের নিজস্ব বাসগৃহ রয়েছে। বাকি খানার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ ভাড়া বাসায়, এক দশমিক ৬৪ শতাংশ সাবলেট এবং দুই দশমিক ৭৬ শতাংশ ভাড়া ছাড়াই সরকারি খাসজমি বা উম্মুক্ত জায়গায় থাকে। অন্যদিকে ঢাকা বিভাগের খানাগুলোর মধ্যে ৪৭ দশমিক ৭৯ শতাংশের নিজস্ব জমি আছে। আর ৪৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ অন্যের জমিতে, তিন দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ারড ল্যান্ড এবং দুই দশমিক ০৩ শতাংশ সরকারি খাসজমিতে থাকে।

নিজস্ব বাসগৃহ না থাকার দিক থেকে পরের স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। এ বিভাগের খানাগুলোর অধিবাসীদের মধ্যে ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশের নিজস্ব বাসগৃহ রয়েছে। বাকি খানার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ ভাড়া বাসায়, শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ সাবলেট এবং চার দশমিক ১৯ শতাংশ ভাড়া ছাড়াই সরকারি খাসজমি বা উম্মুক্ত জায়গায় থাকে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগের খানাগুলোর মধ্যে ৭৩ দশমিক ৭৬ শতাংশের নিজস্ব জমি আছে। আর ১৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ অন্যের জমিতে, দুই দশমিক ৬৬ শতাংশ শেয়ারড ল্যান্ড এবং পাঁচ দশমিক ১৯ শতাংশ সরকারি খাসজমিতে থাকে।

নিজস্ব বাসগৃহ বা জমি না থাকার দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিলেট বিভাগ। এ বিভাগের খানাগুলোর অধিবাসীদের মধ্যে ৮৪ দশমিক ৮০ শতাংশের নিজস্ব বাসগৃহ রয়েছে। বাকি খানার জনগোষ্ঠীর মধ্যে আট দশমিক ৬৩ শতাংশ ভাড়া বাসায়, শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ সাবলেট এবং ছয় দশমিক ২২ শতাংশ ভাড়া ছাড়াই সরকারি খাসজমি বা উম্মুক্ত জায়গায় থাকে। রেন্ট ফ্রি থাকার হার সিলেট বিভাগে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগের খানাগুলোর মধ্যে ৭৩ দশমিক ৭৬ শতাংশের নিজস্ব জমি আছে। আর ১৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ অন্যের জমিতে, দুই দশমিক ৬৬ শতাংশ শেয়ারড ল্যান্ড এবং পাঁচ দশমিক ১৯ শতাংশ সরকারি খাসজমিতে থাকে।

এদিকে খুলনা ও বরিশাল উভয় বিভাগের খানাগুলোর অধিবাসীদের মধ্যে ৯০ দশমিক ২৪ শতাংশের নিজস্ব বাসগৃহ রয়েছে। বাকি খানার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছয় শতাংশের কিছু বেশি ভাড়া বাসায় এবং তিন শতাংশের কিছু বেশি সরকারি খাসজমি বা উম্মুক্তজায়গায় থাকে। তবে খুলনা বিভাগের খানাগুলোর মধ্যে ৮৪ দশমিক ৯২ শতাংশের নিজস্ব জমি রয়েছে। অন্যদিকে বরিশাল বিভাগের খানাগুলোর মধ্যে ৮৫ দশমিক ৩৮ শতাংশের নিজস্ব জমি আছে। এ দুই বিভাগে অন্যের জমিতে, শেয়ারড ল্যান্ড এবং সরকারি খাসজমিতে বসবাসকারীদের হার প্রায় কাছাকাছি।

অন্যদিকে রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের খানাগুলোর অধিবাসীদের নিজস্ব বাসগৃহ থাকার হার সবচেয়ে বেশি। তিন বিভাগে এ হার যথাক্রমে ৯১ দশমিক ০৬, ৯১ দশমিক ৩৯ ও ৯১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এছাড়া রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের খানাগুলোর অধিবাসীদের নিজস্ব জমি থাকার হারও কাছাকাছি। এ হার যথাক্রমে ৮৩ দশমিক ৫২ শতাংশ ও ৮৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। তবে সারাদেশের মধ্যে নিজস্ব জমি থাকার হার সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহ বিভাগে, যা ৮৬ দশমিক ৩০ শতাংশ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০