কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর মৃত্যু দিবস আজ। ১৯৯১ সালের ২১ জুন ঢাকায় তার মৃত্যু হয়। তার জš§ বরিশালে ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর। পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার অন্তর্গত সাহেবের মেঠ গ্রাম। তার প্রকৃত নাম শেখ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ; ‘রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’ নামটি তিনি নিজে গ্রহণ করেন। মা শিরিয়া বেগম, বাবা শেখ ওয়ালীউল্লাহ। শেখ ওয়ালীউল্লাহ ছিলেন চিকিৎসক। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ রাজধানীর ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুল থেকে এসএসসি (১৯৭৪), ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি (১৯৭৬) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮০ সালে বিএ অনার্স (বাংলা) ও ১৯৮৩ সালে এমএ পাস করেন। ছাত্রজীবনেই তার দুটি কাব্য উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯) ও ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম (১৯৮১) প্রকাশিত হয়। এ কাব্য দুটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। তিনি যে তার কালের সংস্কৃতিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন, ওই কাব্য দুটিতে তার প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। তার কবিতায় বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। ফলে সত্তরের দশকেই তিনি শক্তিমান কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সমকালের সমাজ ও রাজনীতির অস্থিরতায় সৃষ্ট হতাশা, সংকীর্ণতা এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও সংঘাতময় জীবনের প্রতিচ্ছবি তার কবিতায় লক্ষণীয়। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ইতিহাস-সচেতন কবি। ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ কবিতায় তিনি যখন বলেন, ‘আজও আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই,/ আজও আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য দেখি,/ ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজও আমি তন্দ্রার ভেতরে/ এদেশ কি ভুলে গেছে সেই দুঃস্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময়?’ তখন তার কবিস্বরূপ আপনাতেই ধরা পড়ে। তার এ সংগ্রামী চেতনা পাঠককে বর্তমানের নৈরাশ্য থেকে আশান্বিত করে তোলে ভবিষ্যতের দিকে। তার মানুষের মানচিত্র (১৯৮৪) কাব্যগ্রন্থে লক্ষ করা যায় এরকম আকাক্সক্ষার সুদৃঢ় অভিব্যক্তি। যেমনÑ‘তোমার অরণ্যে আছে অপরূপ স্বপ্নÑআঁকা চিতল হরিণ।/ তন্দ্রাতুল হড়িয়াল-ডাকা ফাল্গ–নের রাত। শাদা খরগোশ।/ তোমার কিনারে আছে পাললিক নোনাজল, জলের পরশ,/ সরল শিশিরে ধোয়া সোনালিম শস্যময় হেমন্তের দিন।’ রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ছোবল (১৯৮৬), গল্প (১৯৮৭), দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮), মৌলিক মুখোশ (১৯৯০) ও এক গ্লাস অন্ধকার (১৯৯২) উল্লেখযোগ্য। তিনি প্রধানত কবি হলেও কাব্যচর্চার পাশাপাশি সংগীত, নাটক, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ রচনাতেও সমান উৎসাহী ছিলেন। তার সাহিত্যসাধনা ছিল দেশ, মানুষ ও মনুষ্যত্বের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। সাহিত্যসাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮০ সালে তিনি ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতিপুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯৯১ সালের ২১ জুন ঢাকায় তার মৃত্যু হয়। [সংগৃহীত]
