পুঁজিবাজারে আইনি সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাতটি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানকে জরিমানার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটাকে স্বভাবতই দেখতে হবে ইতিবাচক দৃষ্টিতে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা হ্রাসের পাশাপাশি বাজারটিতে বিনিয়োগে আগ্রাসী মনোভাব কমানো যাবে। ২০১০ সালে দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধসের পেছনে কিছু প্রতিষ্ঠানের এ ধারায় বিনিয়োগেরও যে দায় রয়েছে, সেটা কে না জানে! গতকালের শেয়ার বিজে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আরও আট ব্যাংককে শিগগির জরিমানা করা হবে; ছয় ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ নিয়ে চলছে তদন্ত। পুঁজিবাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এ ধরনের আইনবহিভর্‚ত বিনিয়োগের ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির কঠোর মনোভাব দেখানো দরকার। যে কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্ত এখনও চলমান, আমরা চাইবো সেগুলো দ্রুত শেষ করা হবে। অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধেও একই রকম পদক্ষেপ প্রত্যাশিত।
বাড়তি মুনাফার প্রত্যাশায় ব্যাংকগুলো যে পুঁজিবাজারে আইনবহিভর্‚ত বিনিয়োগ করছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। সাম্প্রতিককালে মুনাফা বৃদ্ধির জন্য ব্যাংকিং খাতের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব দেখা যাচ্ছে, এটাও এ ধরনের বিনিয়োগের অন্যতম কারণ। দেশের ব্যবসা খাতে বিনিয়োগের পরিবেশ ফেরানো যাচ্ছে না কাক্সিক্ষত হারে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে যে মুনাফা আসবে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডাররাও স্বভাবতই তার সুফল পাবেন। কিন্তু এই যুক্তিতে আইন লঙ্ঘনের বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ দীর্ঘ সময় পর বাজারে যে স্থিতিশীলতা ফিরেছে, তা নষ্ট হোক এটা কেউই চাইবেন না। এও চাইবেন না, ২০১০ সালের মতো ক্ষতিগ্রস্তÍ হোক লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। অভ্যন্তরীণ পরিপালন কাঠামো সুসংহত হলে পুঁজিবাজারে কোনো প্রতিষ্ঠানের এভাবে যথেচ্ছ বিনিয়োগ করার কথা নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।
সন্দেহ নেই, পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। এ ধরনের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে উৎসাহ জোগানোর জন্য গতকালই এ কলামে পরামর্শ দিয়েছি আমরা। কথা হলো, যে উদ্দেশ্য পূরণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির কথা বলা হয়, ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে তা শতভাগ অর্জন করা যাচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে এদের আগ্রাসী মনোভাবে বিনিয়োগ বরং হিতে বিপরীত হচ্ছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের যে সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, সেটার যথাযথ পরিপালন প্রত্যাশিত। এ লক্ষ্যে এখন থেকে দৈনিক ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর শেয়ার কেনার তথ্য নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ম কার্যকর করা গেলে পুঁজিবাজারে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ আইনি সীমার মধ্যে রাখা সহজ হবে বলে মনে হয়। কোনো প্রতিষ্ঠান এর পরিপালনে ব্যর্থ হলে তার কী শাস্তি হবে, শুরুতেই তাদের এ ব্যাপারেও সতর্ক করা দরকার।
পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমার মধ্যে রাখা হলে এ খাত থেকে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের মুনাফা কমে আসতে পারে। হিসাব সমাপনীতে এসব বিষয় স্পষ্ট হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ওইসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরে। শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ধরে রাখার জন্য মুনাফার বিদ্যমান ধারা কীভাবে বহাল রাখা যায়, সেটাও ভাবতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিনির্ধারকদের। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি জোরদার ও পরিপালন শক্তিশালী করার জন্য কোনো বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হোক, আমরা সেটাও দেখতে চাইবো না। সর্বোপরি মনে রাখা দরকার, সীমাতিরিক্ত বিনিয়োগের সুফল পাচ্ছে কিছু প্রতিষ্ঠান এবং তা সাময়িক সময়ের জন্য। পরিপালন শক্তিশালী হলে দীর্ঘমেয়াদেও এর সুফল পাওয়া যাবে। এও ঠিক, কোনো প্রতিষ্ঠান সহযোগিতার মনোভাব না দেখালে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইনের শতভাগ পরিপালন খুবই কঠিন। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকদের কাছে এ ব্যাপারেও ইতিবাচক ভূমিকা আমরা প্রত্যাশা করি।
Add Comment