কাঁচামরিচের কেজি ৪০০ টাকা দাম বাড়তি শসা-গাজর-আলুর

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কাঁচামরিচের দাম বাড়ছেই। গত সপ্তাহে ২৬০-২৮০ টাকা কেজিদরে মরিচ বিক্রি হলেও এখন তা ৪০০ টাকা ছুঁয়েছে। একই সঙ্গে দাম বেড়েছে আলু, শসা, গাজরের। সরবরাহ কম থাকায় বাজারে সবজির দামও চড়া। আর বাজারে তুলনামূলক গরু ও মুরগির মাংসের চাহিদা কম থাকলেও দাম আকাশছোঁয়া। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় হু হু করে কাঁচামরিচের দাম বাড়ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে কাঁচামরিচের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

কারওয়ান বাজারের আড়তদার আমজাদ মিয়া বলেন, ঈদের মধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে মরিচ ঢাকায় না আসায় দামটা একটু বেশি বেড়েছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে কিছুটা কমে যাবে।

এদিকে, ঈদের আগে থেকে বাজারে শসা, গাজরের দাম বাড়ছিল। ঈদের পরও সেগুলোর দাম আরও বেড়েছে। ঢাকার বাজারে প্রকারভেদে শসা বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা কেজি। গাজরের দামও একই। ঈদে সালাদের চাহিদার কারণে শসা-গাজরের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে লেবুও। বাজারে লেবুর হালি প্রকারভেদে ৫০-৬০ টাকা। আগামী সপ্তাহ থেকে শসা, গাজর ও লেবুর দাম কমে আসতে পারে বলে ধারণা বিক্রেতাদের।

বাজারে সবজির সরবরাহ কম। ফলে সবজির বাজারও চড়া। প্রায় সব সবজির দামই ৫-১০ টাকা বেড়েছে। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮৫-১০০ টাকা কেজি পর্যন্ত; যা গত সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ১০ টাকা বেশি। ঝিঙার কেজি ৭০ টাকা, করলা ৮৫-৯০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫৫-৬০ টাকা, পটোলের কেজি ৬০-৬৫ টাকা, মুখিকচু ১০০-১১০ টাকা, কচুর লতি ৬৫-৭০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৬০-৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, পেঁপে ৫৫-৬০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৬০-৬৫ টাকা কেজিদরে বিক্রি হলেও বর্তমানে বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকা কেজিদরে। ভালো মানের আলুর দাম কেউ কেউ ৭৫ টাকা কেজিও হাঁকছেন। বিক্রেতারা বলছেন, আলুর দাম সামনে আরও বাড়তে পারে।

আদা ও রসুনের দামও ঈদের আগে হু হু করে বেড়েছিল। বর্তমানে তা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ঈদের আগে আদার দাম কেজিপ্রতি ৩৩০-৩৫০ টাকা উঠলেও তা কমে এখন ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুনের দামও কেজিতে কিছুটা কমেছে। ঈদের আগে রসুন বিক্রি হচ্ছিল ২৫০ টাকায়; যা বর্তমানে ২২০-২৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজের কেজি ৮৫-৯০ টাকা।

বাজারে তুলনামূলক গরু ও মুরগির মাংসের চাহিদা কম থাকলেও দাম আকাশছোঁয়া। কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকা, দেশি মুরগি ৭০০-৭৩০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকায়। আর প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়। এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৮৫০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১০৫০ থেকে ১২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন, কোরবানি ঈদের পর সাধারণত বাজারে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা কম

থাকে। দামও থাকে পড়তির দিকে। কিন্তু এবার বাজারে সে চিত্র দেখা যায়নি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।

মামুনুল ইসলাম নামে বেসরকারি এক চাকরিজীবী বলেন, ঈদ উপলক্ষে বাসায় মেহমানরা আসেন, তাদের তো শুধু গরুর মাংস দিয়ে খাওয়ানো যায় না। মুরগির মাংসও দরকার হয়। বাজারে এসে দেখি দাম কিছুটা বাড়তি। সাধারণত এ সময়টায় গরু-মুরগি সবকিছুর দামই কম থাকে। কিন্তু এবার কমেনি বরং বেড়েছে।

রুবেল মিয়া নামে এক দিনমজুর বলেন, ঈদে তো আমরা কোরবানি দিতে পারি না। আমাদের জন্য মুরগির মাংসই সম্বল। কিন্তু দাম তো কমেনি বরং বেড়েছে। গরু-খাসির মাংসের দাম অনেক বেশি, তাই ব্রয়লার মুরগি কিনেছি। বাজারে ব্রয়লার মুরগির দামও বেশি।

ঈদের একদিন আগেও বাজারে দাপট ছিল গরুর মাংসসহ ব্রয়লার ও অন্য মুরগির। সপ্তাহ খানেক আগে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্যবসায়ীরা ৭৮০ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি করছেন। পাশাপাশি খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।

ঈদে ডিমের চাহিদা তেমন না থাকলেও দাম কমেনি। বর্তমানে বাজারে ব্রয়লার মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৪০-১৪৪ টাকা। আর সাদা ডিমের ডজন ১৩৪-১৩৬ টাকা। ঈদে মানুষ ডিম কম খেলেও চলতি সপ্তাহ থেকে আবারও চাহিদা বাড়তে পারে বলে ধারণা বিক্রেতাদের। ফলে দামও কিছুটা বাড়তে পারে।

মুরগি ও মাংসের বাজারে কেনাবেচা কম হলেও মাছের বাজারে ক্রেতাদের ভিড় অনেক। ঈদের পর মাছের চাহিদা বেড়েছে। ফলে দামও কিছুটা বেশি। বাজারে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। এর চেয়ে বড় রুই কিনতে হলে ৩৫০-৩৮০ টাকা গুনতে হবে ক্রেতাকে। ইলিশের দাম বাড়তিই রয়েছে। ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ১৪০০ টাকা হাঁকছেন বিক্রেতারা। এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা দরে। এছাড়া মধ্যবাড্ডা, রামপুরা এবং ডিআইটি ফিশ মার্কেটে কাতল মাছের কেজি ৩২০-৩৩০ টাকা, পাঙ্গাশ ২০০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাকা, বোয়াল ১০০০-১২০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, খুচরা বাজারে চালের দাম চলতি সপ্তাহেও স্থিতিশীল রয়েছে। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০-৮৫ টাকা, মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৭৫-৭৮ টাকা, আটাশ ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা দরে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মোটা চাল প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫২-৬০ টাকায়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০