হাইড্রোলিক হর্নের সমস্যাটা এত তীব্র হয়ে উঠত না, যদি পুলিশের ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট হতেন। এসব হর্ন যারা আমদানি ও বিক্রি করেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া গেলেই কাজটা সহজ হয়ে যেত বলে আমরা মনে করি। একে বলে উৎসে হাত দেওয়া। উৎসে হাত না দিয়ে আমরা অনেক সময় অন্যখানে সময় ব্যয় করি। তাতে ফায়দা হয় না বা সামান্য ফায়দা পেতেও অনেক সময় লেগে যায়। অ্যাম্বুলেন্সসহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবশ্য ওই ধরনের হর্ন ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তবে সাধারণভাবে এটা নিষিদ্ধ ও আইনত দণ্ডনীয়। আর তা সারা দেশেই প্রযোজ্য। তবে ঘনবসতিপূর্ণ ও যানজটকবলিত রাজধানীতে হাইড্রোলিক হর্নের সমস্যা তীব্র। সে কারণেই এ বিষয়ে প্রশাসনকে সক্রিয় করতে হাইকোর্টে রিট করেছিল একটি অধিকার সংগঠন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহারকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে এক্ষেত্রে অগ্রগতির প্রতিবেদন চান আদালত। সে প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর হাইকোর্ট বলেছেন জব্দ হর্নগুলো থানায় জমা দিয়ে তা ধ্বংস করে ফেলতে। এক্ষেত্রেও সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন আদালত।
হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে এ পর্যন্ত যেটুকু করা হয়েছে, তা সন্তোষজনক মনে হচ্ছে না। আমরা কম যানচালকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গৃহীত হতে দেখেছি। আদালতে রিটকারীর পক্ষে এমনও বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ হর্ন বন্ধে জরিমানা খুব সামান্য বলে ওটা দিয়েও অনেকে আবার নাকি ওইসব হর্ন গাড়িতে লাগাচ্ছেন। আইনকানুনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ সাধারণভাবে কম, এটা বলাই বাহুল্য। মানুষকে তা মানতে বাধ্য করার উদ্যোগও কম। তার প্রমাণ দিচ্ছে নিষিদ্ধ হর্ন বন্ধে তুচ্ছ জরিমানার পরিমাণ। এক্ষেত্রে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হোক দ্রæত। তার আগে অবশ্য প্রচলিত আইনেই ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক। শব্দদূষণকারী হর্ন বন্ধে প্রশাসন ও সরকার যে সচেষ্ট, সেটা দৃশ্যমান হওয়া দরকার। জনমনে এর একটা প্রভাব রয়েছে। মানুষকে বুঝতে দিতে হয় যে, সরকার কোন ক্ষেত্রে কী সংস্কার চায়। কাজটি সহজ করতে হাইড্রোলিক ও এ-জাতীয় বিচিত্র হর্ন আমদানিকারকদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিতে একটা আন্তমন্ত্রণালয় সহায়তাও প্রয়োজন। শব্দদূষণ কমিয়ে আনার এ কার্যক্রমে পরিবেশ অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততাও আমরা দেখতে চাইব। একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতকে এ বিষয়ে সিরিয়াস দেখা যাচ্ছে। সে ধারায় অন্তত প্রশাসনের সক্রিয়তা আমরা দেখতে চাইব। জনস্বার্থে পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের সক্রিয় করতে মানুষকে কেন আদালতের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে, সেটাও প্রশ্ন। নির্বাহী বিভাগের ভাবমূর্তির জন্য যে তা ইতিবাচক নয়, সেটাও তাদের উপলব্ধিতে আসুক।
Add Comment