রাতে মোবাইল টাওয়ার নিষ্ক্রিয় রাখার প্রস্তাব প্রাণ গোপালের

নিজস্ব প্রতিবেদক: মোবাইল ফোন থেকে তরুণ সমাজকে একটু দূরে রাখতে রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত মোবাইল টাওয়ারগুলোকে নিষ্ক্রিয় করার সুপারিশ করেছেন দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রাণ গোপাল দত্ত।

গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রাণ গোপাল দত্ত এ কথা বলেন।

বক্তব্যে কালোটাকা সাদা করার ব্যবস্থার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন এবং বিভাগীয় পর্যায়ে ডাক্তারদের নন প্র্যাকটেসিংয়ের আওতায় আনার প্রস্তাব করেন। এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, ১০০ বছরের কথা চিন্তা করলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এই শিক্ষা পেতে হলে দরকার একটা সুস্থ জাতি। সেই জাতির জন্য প্রয়োজন মেডিকেশন। আমাদের এ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে অনেকেই অনেক সমালোচনা করেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা এখনও অনেকটাই উন্নতির পর্যায়ে রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা বিচ্যুতি লক্ষ্য করা যায় এবং সেগুলো ডাক্তার ও ডাক্তারদের আবাসিক সমস্যা সমাধান না হলে কখনোই সেটা দেয়া সম্ভব হবে না।

একটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেখানে ১৫, ২০ বা ২৫ জন ডাক্তারকে পদায়ন করা হয় সেখানে দুজন বা তিনজন ডাক্তারের থাকার জায়গা নেই। মেডিকেল সার্ভিস সার্বক্ষণিক আবাসিক সার্ভিস। সেটার জন্য আবাসিক সুবিধা দেয়াটা সবচেয়ে অপরিহার্য। অবশ্যই আমাদের ডাক্তারদেরও সেই সার্ভিসটা দিতে হবে। আজকে এডুকেশন, মেডিকেশন, কালটিভেশন যাই বলি না কেন সবচেয়ে ব্যয়বহুল আইটেম হলো হেলথ সার্ভিসেস।

এখানে পরীক্ষা, নিরীক্ষা, গবেষণা এবং চিকিৎসার যে উপকরণ রয়েছে প্রত্যেকটার দাম আকাশচুম্বী হয়ে আছে। অমর্ত্য সেনের ভাষায় যদি আমরা বলি, শিক্ষা এবং চিকিৎসা সেটা থাকা উচিত সরকারি খাতে। এটাকে যদি বেসরকারি করা হয় তাহলে শিক্ষা এবং চিকিৎসার কোনো গুণগত মান থাকে না, তখন সেটা যায় একটা পণ্য।

দুর্ভাগ্যবশত সব দেশেই শিক্ষা এবং চিকিৎসা পণ্য হয়ে গেছে। আপনার টাকা রয়েছে আপনি চিকিৎসা পাবেন, আপনার টাকা নেই তো আপনি চিকিৎসা পাবেন না। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেশিরভাগ লোক যারা মধ্যম শ্রেণির নিচে রয়েছেন তাদের বেলায় কিন্তু দেখার মতো কেউ নেই। আমার মনে হয়, এ মুহূর্তে আমাদের যথেষ্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরি হয়েছে। এখন সুযোগ এসেছে প্রত্যেকটা বিভাগীয় শহরে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে কীভাবে নন প্র্যাকটেসিংয়ের আওতায় আনা যায়। নন প্র্যাকটেসিং ডাক্তারদের সুবিধাটা হলো, আমার মনে হয় যদি ডাক্তারদের নন প্র্যাকটেসিং অ্যালাউঞ্জসহ আবাসিক, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় অনেক ডাক্তার নন-প্র্যাকটেসিংয়ে রাজি হবেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা এই বাজেটে কালোটাকা এবং সাদা টাকা নিয়ে কথা তুলেছি। ইনফরমাল ইকোনমিকে কোনো অবস্থাতেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না সেই ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় কিছুই বলেননি। এই গ্রে মানিটা সেটাও কিন্তু আনট্যাক্স মানির চেয়েও আরও অনেক বেশি খারাপ অর্থাৎ অপ্রদর্শিত আয়ের চেয়েও খারাপ। সেটাকে যদি সংকুচিত করা না যায় তাহলে মানি লন্ডারিং কোনো অবস্থাতেই স্থিমিত হবে না বা বন্ধ হবে না।’

প্রাণ গোপাল বলেন, ‘আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে সবসময় প্রযুক্তির পক্ষে। আমি ডিজিটাল বাংলাদেশের পক্ষে, স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে কিন্তু মোবাইল ফোন যেভাবে অপব্যবহার হচ্ছে আমার মনে হয় না আর বেশিদিন আমাদের এই প্রজš§ প্রতিবন্ধী না হয়ে থাকতে পারবে। বিল গেটস নিজে বলেছেন, উনি উনার সন্তানকে ১৬ বছরের আগে মোবাইল ফোন টাচ করতে দেননি। মার্টিন কুপার এক বছর আগে বলেছেন, আমি যদি জানতাম যে, একজন ব্যক্তি, এই প্রজš§ মোবাইল ফোনের সঙ্গে ৫-৬ ঘণ্টা আঠা হয়ে লেগে থাকবে তাহলে আমি বলব এটা আবিষ্কার করা আমার জন্য একটা নির্মম ভুল হয়েছে বলে আমি মনে করি। একই সঙ্গে বুকার প্রাইজ উইনার হাওয়ার্ড জ্যাকপসন বলেছেন, আগামী ২০ বছর পরে বিশ্বের জনসংখ্যা লেখাপড়ায় প্রতিবন্ধী হয়ে যাবে, তারা প্রযুক্তি চালাতে পারবে কিন্তু কম্পজিশন করতে পারবে না, কোনো কিছু শিখতে পারবে না।’

সুতরাং কোনোভাবে রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলে মোবাইল টাওয়ারগুলোকে নিষ্ক্রিয় করা যায় কি না অথবা সেই মোবাইল টাওয়ার যাতে ব্যবহƒত না হয়, মানে ফ্রিল্যান্সিং বা অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বিকল্প পথ ছাড়া অন্য কোথাও যেন ব্যবহƒত না হয় সেই ক্ষেত্রে আমাদের নজর দেয়া উচিত।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০