প্রতিনিধি, বান্দরবান: পাহাড়, ঝিরি-ঝরনা আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বান্দরবান। বছরের এই সময়টায় পর্যটকদের ভিড় থাকে বান্দরবান জেলার সব পর্যটন কেন্দ্রে। এছাড়া বছরের দুটি ঈদেই থাকে বাড়তি পর্যটকের চাপ। পর্যটকদের জায়গা দিতে হিমশিম খেতে হয় জেলার আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীদের। তবে বর্তমানের চিত্র একেবারেই ভিন্ন, পর্যটক বরণে হরেক রকমের লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে জেলার পৌরসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এছাড়া পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যাবসায়ীরাও পর্যটকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে নিয়েছেন বিভিন্ন উদ্যোগ। এত কিছুর পরেও জেলা সদরের নিকটবর্তী পর্যটনকেন্দ্র নীলাচল, নীলগিরি, মেঘলা ও শৈলপ্রপাত পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় নেই আশানুরূপ সমাগম। এছাড়া পর্যটক ভ্রমণের ওপর স্থানীয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলায় সন্ত্রাসবিরোধী যৌথ অভিযান চলমান থাকায় ওইসব উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোয় ঘুরতে পর্যটকদের নিতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি বা ছাড়পত্র।
বান্দরবান হোটেল রিসোর্ট অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের দেয়া তথ্যমতে, জেলায় ৬৬টির বেশি আবাসিক হোটেল ও রিসোর্টে আর্থিক সংকট কাটাতে পর্যটকদের জন্য ২০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েও আশানুরূপ পর্যটক পাওয়া যাচ্ছে না।
পর্যটক সংকটের বিষয়ে বান্দরবান হোটেল রিসোর্ট অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দীন বলেন, বান্দরবানে চলমান সংকটের কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী পর্যটক পাইনি। ঈদের দ্বিতীয় দিনে পর্যটকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ২০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট ঘোষণা করেছি। বান্দরবানের জেলা সদরের আশেপাশে যেসব পর্যটন কেন্দ্র আছে এবং নীলাচল, নীলগিরি, মেঘলা, শৈলপ্রপাতসহ যেসব জায়গায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ভ্রমণ করা যায়, সেসব স্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত ভালো হলেও চলমান সংকটের কারণে পর্যটকরা আতঙ্কিত।
ডমেস্টিক ট্যুরিস্ট যারা আছেন, তারা এ কারণে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বান্দরবানের পর্যটন খাতের অবস্থা খুবই খারাপ, আমরা আর্থিক সংকটে আছি। জুন মাসে আমাদের ব্যাংকঋণ ও সরকারি ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। এখন কীভাবে এসব পরিশোধ করব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
বান্দরবানে ঘুরতে আশা পর্যটক নাসিম জানান, তারা চাঁদপুর থেকে এই প্রথম সাত বন্ধু মিলে ঘুরতে এসেছেন বান্দরবানে। যাবেন থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার রেমাক্রি ফলস, তিন্দু, দেবতাখুম, নাফাখুম, বগালেকসহ আরও বেশ কয়েকটি দর্শনীয় পর্যটন স্পটে। তবে তাদের এজন্য অপেক্ষা করতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতির জন্য।
এদিকে নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে আশা পুরান ঢাকার বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন নিলয় বলেন, দুবছর আগেও একবার বান্দরবানে নীলাচল, নীলগিরি ও সাঙ্গু নদী ঘুরেছি। এখানকার পরিবেশ খুবই ভালো।
এদিকে নীলাচলে ঘুরতে এসে আশা ইউনিটি কোচিংয়ের সদস্য অনিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে মনের আনন্দে গিটার বাজিয়ে গাইলেনÑ‘বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে, দেওয়ানা বানাইছে…।’ চাঁদের গাড়ির ড্রাইভার নেজাম উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন পর্যটক কম আসায় গাড়িভাড়া পান না, ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এদিকে পর্যটক আগমন কম হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় চাঁদের গাড়িচালক থেকে শুরু করে পর্যটন কেন্দ্রনির্ভর গড়ে ওঠা ছোট ছোট ব্যবসায়ী।
এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার যেসব উপজেলায় যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান আছে, সেসব উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরামর্শ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাবে জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত দর্শনীয় পর্যটন স্পটগুলো। এমনটাই প্রত্যাশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।