বরগুনার আমতলী উপজেলায় সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস খালে পড়ার ঘটনার পর ১০ জনের মরদেহ উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে। শনিবার বেলা ২টায় উপজেলার চাওড়া-হলদিয়া হাটসংযোগ সেতুতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দেশব্যাপী শতশত ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলাচল করছে মানুষ যানবাহন। সে তুলনায় বড় দুর্ঘটনা ঘটছে না বলেই ধারণা। কিন্তু আমতলীর দুর্ঘটনায় প্রমাণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কত উদাসীন। এমন ঝুঁকিপূর্ণ সেতু যেন গ্রামবাংলারই চিত্র। এতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রশাসনের উদাসীনতা সামনে আসে। প্রতি বছরই দেশের কোনো না কোনো এলাকায় বন্যা হওয়ায় সেখানকার সড়ক-মহাসড়কে সৃষ্টি হয় বড় বড় গর্ত, ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেতু। পরবর্তী সময় বন্যার পানি নেমে গেলে সড়ক-সেতু ব্যবহারের উপযোগী থাকে না। ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় যানবাহনকে। সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ মানুষকে নতুন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। কিন্তু এ ভোগান্তি কারও দায়িত্বহীনতায় দীর্ঘায়িত হবে, এটি দুঃখজনক।
আমরা জানি না সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কের কতটি সেতু ও কালভার্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। গণমাধ্যম প্রকাশিত প্রতিবেদন জানা যায়, যেকোনো সময় এসব সেতু ভেঙে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সড়ক-মহাসড়ক এবং এর মধ্যকার সেতুতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেই কেবল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের টনক নড়ে এবং তৎপর হতে দেখা যায়। অথচ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়-বিভাগের দায়িত্বই হচ্ছে, নির্মিত সড়ক-মহাসড়ক ও সেতুর নিয়মিত তদারকি এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা। তাদের এই উদাসীনতা ও গাফিলতির কারণে উল্লেখিত শত শত সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে একেকটি সেতু এখন মরণফাঁদে পরিণত হচ্ছে। এ ধরনের সেতুর তথ্য কাগজে-কলমে থাকলেও তা সংস্কারের উদ্যোগ নেই। এসব সেতু দিয়ে যানবাহন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যাতায়াত করছে। সাধারণত একটি সেতুর স্থায়িত্বকাল নির্ধারণ করেই তা নির্মাণ করা হয়। এই স্থায়িত্বের সঙ্গে এর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি জড়িত। পাশাপাশি এর মধ্য দিয়ে কী ধরনের, কত ওজনের এবং দৈনিক কত সংখ্যক যানবাহন চলাচল করতে পারবে, তাও হিসাবের মধ্যে রাখতে হয়। দেখা যায়, একটি সেতু নির্মাণের পর এসবের কোনো হিসাব-নিকাশের বালাই থাকে না। যেমন খুশি তেমন ব্যবহার করা হয়। এতে যে পর্যন্ত সেতুটির মেয়াদ ও টিকে থাকার কথা, তার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সড়ক-মহাসড়কের শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত পুলিশও তার যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না। সড়ক ও সেতুতে যানবাহনের ধরন অনুযায়ী চলাচল যেমন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, তেমনি ওভারলোডিং যানবাহনও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। একটি সড়ক ও সেতুতে কত ওজনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে, তার মনিটরিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এ এক অরাজক পরিস্থিতি। যে যেভাবে পারছে সড়ক ও সেতু ব্যবহার করে চলেছে। দেশব্যাপী ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ও সেতুর হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করে দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।