প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতি বছর এই সময়ে বাজারে বিক্রি হয় তালশাঁস। খেতে সুস্বাদু এই মৌসুমি ফলের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তবে দেশের বিভিন্ন জেলায় তালের চাহিদা বেশি না থাকায় তাল ছোট থাকতেই শাঁস বিক্রির আশায় এগুলো ঠাকুরগাঁওসহ আশেপাশের জেলাগুলোয় নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। তালশাঁসের চাহিদা প্রচুর থাকায় প্রত্যেক ব্যবসায়ী তা বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হন। এ বছরও শহরের আমতলী, বাসস্ট্যান্ড, ঠাকুরগাঁও রোড, কালিবাড়ী বাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্রি হচ্ছে তালশাঁস। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এটি বিক্রি হচ্ছে।
তালশাঁস ব্যবসায়ী আজাহার বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে বগুড়া জেলার আদমদীঘি থেকে এসেছি। আমরা বগুড়ায় প্রতি বছর তালের বাগান কিনে থাকি। বাগানে প্রায় ১৩০-১৫০টি তালগাছ থাকে। এক থেকে দেড় লাখ টাকা দিয়ে বাগান চুক্তিভিত্তিক কিনে তা থেকে তাল ছোট থাকতেই আমরা দেশের বিভিন্ন জেলায় চাহিদা অনুসারে বিক্রি করে থাকি।
অপর বিক্রেতা নাজমুল হাসান বলেন, কয়েক দিন হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ে এসেছি। প্রতিটি তাল ২৫ টাকা বিক্রি করছি। এছাড়া প্রতিটি তালশাঁস ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি তাল থেকে কমপেক্ষ তিনটি শ্বাস হয়। এছাড়া কেউ যদি বেশি পরিমাণে তাল বা তালশাঁস কেনেন, তাহলে কিছুটা কম টাকা নেয়া হয়।
পৌর শহরের কালিবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বলেন, বেশ কয়েক দিন হয়ে গেল তালশাঁস বিক্রি হচ্ছে। পর্যাপ্ত বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা সমাগমও হচ্ছে প্রচুর। প্রতিদিন তাল বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার মতো লাভ হচ্ছে।
তালের শাঁস কিনতে আসা ক্রেতা শহরের শাহপাড়া মহল্লার মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর এ সময়ে এটা পাওয়া যায়। খেতে অনেক সুস্বাদু ও ভালো লাগে। প্রতিটি তাল থেকে দু-চারটি শাঁস পাওয়া যাচ্ছে। বড় প্রতিটি তাল ৩০ টাকায় কিনেছি। দাম কিছুটা কম হলে আরও বেশি পরিমাণে নেয়া যেত।
সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের বরুনাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল আলী বলেন, তালশাঁস আমার ও পরিবারের সবার খুব পছন্দের। প্রত্যেক তালের আঁটি গত বছর পাঁচ টাকা থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল; কিন্তু এ বছর ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তালশ্বাসের উপকারিতার ব্যাপারে কথা হয় ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মিনহাজ কৌশিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, এটি অনেক ভালো জনপ্রিয় ফল। তালের শাসেই রয়েছে এমন কিছু পুষ্টিগুণ, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটি জলশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করে এবং হাড়ের গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এছাড়া তালশাঁসে রয়েছে ভিটিামিন এ, সি ও বি কমপ্লেক্স, যা দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বমিভাব দূর করতে সাহায্য করে। এটি লিভারের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। সর্বোপরি ত্বক সুন্দর, উজ্জ্বল ও দীপ্তিময় করে তুলতে নিয়ম করে তালের শাঁস খাওয়া খুবই উপকারী।