দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে

যে কোনো দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন গণমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া রাষ্ট্রের কার্যক্রম যাতে আইন অনুযায়ী সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিতকল্পে সরকারের ত্রুটিসমূহ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যম অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের সাবেক দুই কর্মকর্তার দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর পুলিশ সার্ভিস অ্যায়োসিয়েশন থেকে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে, তা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারি চাকরিজীবীদের দুর্নীতির বিষয়টি বেশ জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে। কেবল প্রথাগত গণমাধ্যমেই নয়, বরং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব বিষয়ে তুমুল আলোচনার ঝড় বইছে। বিশেষ করে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও ডিএমপির সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়ার দুর্নীতি দিয়ে গণমাধ্যম বেশ সরব। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা মতিউর রহমানসহ আরও বেশ কয়েকজন সরকারি চাকরিজীবীর জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন অস্বাভাবিক সম্পদের বিষয়ে তথ্য বেরিয়ে আসে। এর মধ্যে কয়েকদিন আগে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। যে ভাষায় বিবৃতিটি দেয়া হয়েছে, তাতে এক ধরনের কর্তৃত্বপরায়ণতা ও হুমকির আভাস রয়েছে বলে মনে করছে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এমনকি সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন পুলিশের এহেন বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছে।

এসব প্রতিবাদ অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত ও দুর্নীতি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই পরিগণিত হয়। তাছাড়া পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের ওই বিবৃতি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বৈকি। কেননা সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া তাদের এই বিবৃতি সরকারের ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে হলে অবধারিতভাবে গণমাধ্যমের স্বক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। কারণ প্রভাবশালীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হলে শক্তিশালী জনমতও প্রয়োজন। আর সেই জনমত গঠন করতে হলে গণমাধ্যমকে সঙ্গে রাখতে হবে।

সরকারি কার্যক্রমে দুনীতির কারণে আন্তর্জাতিক নানা সূচকে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া সরকারি তথ্যের অবাধ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে বাজেটের ওপেননেস সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। আর দুর্নীতি প্ররিরোধের বিষয়ে আইনগতভাবেই সরকার দায়বদ্ধ। দুর্নীতি সংঘটিত হওয়ার বৃহত্তর ক্ষেত্র হচ্ছে সরকারি পরিষেবাসমূহ। সুতরাং সরকারি পরিষেবাগুলোর সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সব সরকারি চাকরিজীবী ও তাদের নিকট আত্মীয়দের সম্পদের হিসাব দাখিলের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা আবশ্যক। দুনীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা যাতে আরও সম্প্রসারিত হয়, সে বিষয়ে সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করবে বলেই বিশ্বাস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০