শেয়ার বিজ ডেস্ক: একটানা ৪০ দিন তীব্র তাপপ্রবাহ শেষে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত অঝোরে ঝরা বৃষ্টিতে ভারতের রাজধানী দিল্লির জনজীবন বিপর্যস্ত। ৫ ঘণ্টার বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালের একাংশের ছাদ ধসে পড়ে। তাতে সরকারিভাবে একজনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে। আহত কমপক্ষে পাঁচজন। খবর: প্রথম আলো।
বেসরকারি মতে, নিহত মানুষের সংখ্যা তিন। ওই দুর্ঘটনার পর বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনাল বন্ধ করে দেয়া হয়। ব্যাহত হয় বিমান পরিষেবা। এ বছরেই ওই টার্মিনালের সম্প্রসারিত অংশের উদ্বোধন করা হয়েছিল। কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে।
দিল্লিতে এত দিন ধরে এত তীব্র তাপপ্রবাহ গত ৭০ বছরে দেখা যায়নি। কাজেই তিন দিন আগে আবহাওয়া অফিস যখন সপ্তাহান্তের ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল, রাজধানীর মানুষ তখন স্বস্তির শ্বাস ফেলেছিলেন। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে নামে আকাশভাঙা বৃষ্টি। সেই সঙ্গে প্রবল ঝড় ও বজ্রপাত। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয় ২২৮ মিলিমিটার। তাতে রাজধানীর বহু এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। ডুবে যায় শয়ে শয়ে গাড়ি, বহু নিচু এলাকার বাড়ির একতলা। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ছিল বৃষ্টির রেশ। তারপর বৃষ্টি বন্ধ হয়। ততক্ষণে শুরু হয়ে যায় যানজট। গতকাল কাজের দিন হওয়ায় অনেকেই গাড়ি ছেড়ে মেট্রোয় যাতায়াতের সিদ্ধান্ত নেন। তাতে চাপ বাড়ে মেট্রোয়। সব মিলিয়ে দুর্ভোগের এক শেষ।
অথচ আবহাওয়া অফিসের মতে, এটা বর্ষার বারিধারা নয়। দিল্লিতে বর্ষা ঢুকতে এখনও দিন তিনেক দেরি। আজ শনিবারও এই বৃষ্টি চলার কথা। এতে তাপমাত্রা অনেকটা কমে গেলেও দিল্লির সর্বত্র নিষ্কাশন ব্যবস্থার যে হাল হয়েছে, তাতে বর্ষার কথা ভেবে শহরবাসী দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।
দিল্লিতে বিমানবন্দরের ছাদ ভেঙে পড়ার ঘটনায় সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা হয়েছে। তৃণমূল সংসদ সদস্য সাকেত গোখলে এ বিপর্যয়ের জন্য সরাসরি দায়ী করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। সামাজিক মাধ্যমে কিছু ছবি দিয়ে তিনি লেখেন, ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী তড়িঘড়ি এই নির্মীয়মাণ টার্মিনালের উদ্বোধন করেছিলেন। তিনজনের মৃত্যুর জন্য প্রধানমন্ত্রীই দায়ী।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিংয়েরাও এই বিপর্যয়ের দায় সরাসরি ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও প্রধানমন্ত্রী মোদির ঘাড়ে চাপিয়েছেন। খাড়গে ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে লিখেছেন, সরকারের দুর্নীতি ও অবহেলাই এর কারণ।
পরপর ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার উল্লেখ করে খাড়গে দীর্ঘ পোস্টে লিখেছেন, ‘দিল্লির মতো জব্বলপুর বিমানবন্দরেরও ছাদ ভেঙে পড়েছে। অযোধ্যার রাস্তাঘাটের হাল শোচনীয়। রামমন্দিরের ছাদ থেকে পানি পড়ছে। মুম্বাইয়ের ট্রান্স হারবার লিংক রোডে ফাটল দেখা গেছে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বিহারে ১৩টি নতুন সেতু ভেঙে গেছে। দিল্লির প্রগতি ময়দানের সুড়ঙ্গ পথ ভেসে যায় একটু বৃষ্টি হলেই। গুজরাটের মরবি সেতুও ভেঙে গেছে। বিশ্বমানের অবকাঠামো নির্মাণের দাবির এসবই টুকরা টুকরা নমুনা।’ পোস্টে খাড়গে আরও লেখেন, ‘১০ মার্চ এই টার্মিনালের উদ্বোধন করে মোদি বলেছিলেন, তিনি অন্য গ্রহের মানুষ। একটা দুর্নীতিগ্রস্ত অকর্মণ্য স্বার্থপর সরকারের অপকর্মে প্রাণ গেল নিরীহ মানুষের।’
প্রিয়াঙ্কাও ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে হিন্দিতে লিখেছেন, গত মার্চ মাসেই এই টার্মিনালের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিন মাস আগে জব্বলপুর বিমানবন্দরেরও উদ্বোধন করেছিলেন তিনি। তার ছাদও পড়ে গেছে। অযোধ্যার উন্নয়নের বহর দেখে দেশের মানুষ অখুশি। এসবই দুর্নীতির নয়া মডেল ‘চান্দা লো ঔর ধান্দা দো’ (নির্বাচনী বন্ড নিয়ে কংগ্রেসের সেøাগান ‘ঘুষ নাও, কাজ দাও’) অংশ। প্রিয়াঙ্কার প্রশ্ন, ‘প্রধান উদ্ঘাটন মন্ত্রী (মোদি) কি এই ভ্রষ্টাচার ও অপনির্মাণের দায়িত্ব নেবেন?