মিয়ানমার যুদ্ধের উসকানি দিয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে যুদ্ধের উসকানি ছিল। সতর্ক থেকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল জাতিসংঘ সফর শেষে দেশে ফিরে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একেবারে প্রতিবেশী। একটা পর্যায়ে এমন একটা ভাব দেখাল; আমাদের সঙ্গে যুদ্ধই বেধে যাবে, এরকম একটা। আমাদের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড, পুলিশ সবাইকে সতর্ক করলাম; যে কোনোমতেই কোনো রকম উসকানির কাছে তারা যেন বিভ্রান্ত না হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি নির্দেশ না দেব।

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ জাতিসঙ্গে প্রশংসিত হয়েছে। এজন্য দেশে ফেরার পর তাকে বিপুল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত রাস্তায় দুই পাশে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে ও ফুল ছিটিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে যোগ দিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক পৌঁছান। পরে ২১ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন।

অবিলম্বে মিয়ানমারে সহিংসতা ও জাতিগত নিধন নিঃশর্তভাবে বন্ধ করে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট পাঁচটি প্রস্তাব পেশ করেন।

উসকানিতে সাড়া না দেওয়ায় সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এরকম একটা ঘটনা ঘটাতে চাইবেই। অনেকেই আছে এখানে নানা রকম উসকানি দেবে বা একটা এমন অবস্থা তৈরি করতে চাইবে, যেটা হয়তো তখন অন্যদিকে দৃষ্টি ফেরাবে; সেদিকে আমরা খুবই সতর্ক ছিলাম।

বাংলাদেশের ভূমিকার কারণে রোহিঙ্গা সংকট বিশ্ববাসীর মনোযোগ পেয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের আশ্রয় না দিলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারত না। মানুষ মানুষের জন্য, বিপন্ন মানুষকে আশ্রয় দেওয়া মানুষের কর্তব্য।

প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং বাংলাদেশের মানুষের রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে বলেই আমরা এ চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি। জাতীয় কর্তব্য হিসেবে মিয়ানমারের এই মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। প্রয়োজনে এক বেলা খাব, আরেক বেলা তাদের ভাগ করে দেব।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে তা কাটিয়ে উঠতে বোন শেখ রেহানার ভ‚মিকার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রথমে আমরা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। খোঁজ নিয়ে দেখলাম যে অত্যাচার হয়েছে, মেয়েদের ওপর অত্যাচার তাদেরকে আশ্রয় দিতে হলো। পৃথিবীতে বহু এরকম ঘটনা ঘটে। অনেকে দরজা বন্ধ করে রাখেন।

শেখ হাসিনা বলেন, রেহানা বলল, ১৬ কোটি লোককে খাওয়াচ্ছো, আর পাঁচ-সাত লাখ লোককে খাওয়াতে পারবে না? আমি সেখানে গেলাম, সবাইকে ডেকে বললাম, আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ মানুষগুলোকে আশ্রয় দেওয়া, খাওয়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানোর অনুভ‚তি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার অনুপস্থিতিতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্প্যান বসানোর তারিখ পিছিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। ওবায়দুল কাদের বারবার মেসেজ পাঠাচ্ছে, ফোনে কথা হচ্ছে, বলছে, ‘আপনার জন্য দেরি করব’। আমি বললাম, না। দেরি করবা না।

পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানোর সময় আনন্দে কেঁদেছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ওই সময় বসে দেখে সত্যি কথা বলতে কী… আমরা দুই বোন ওখানে কেঁদেছিলাম; রেহানা আমি… কী যে অপমান, কত কিছু যে হয়েছে, তা বলার মতো নয়।

প্রসঙ্গত, বৌদ্ধপ্রধান মিয়ানমারের রাখাইনে গত ২৫ আগস্ট সহিংসতা শুরু হলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমের ঢল নামে বাংলাদেশ সীমান্তে। রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক হিসেবে মানতে নারাজ, মিয়ানমারের সেনারা শরণার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে; সীমান্তে পেতে রাখে স্থল মাইন। এর মধ্যেই অসংখ্যবার মিয়ানমারের সামরিক হেলিকপ্টার বাংলাদেশের আকাশ সীমা লঙ্ঘন করে, যাকে উসকানি হিসেবে উল্লেখ করে ঢাকার পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের টানাপড়েন বহু দিনের। মিয়ানমারে নিপীড়িত চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল, এখন যোগ হয়েছে আরও পাঁচ লাখের বেশি।

বাংলাদেশ বারবার আহবান জানালেও রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে কোনো তৎপরতা দেখায়নি মিয়ানমারের জান্তা সরকার। উল্টো রোহিঙ্গাদের ‘অবৈধ বাঙালি অভিবাসী’ বলে চিহ্নিত করে আসছে তারা।

এবার সমালোচনার মুখে স্টেট কাউন্সেলর সু চি শরণার্থীদের ফেরত নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তার দফতরের মন্ত্রী ঢাকায় এসে আলোচনাও করে গেছেন।

শেখ হাসিনা জাতিসংঘে ভাষণে রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে জোর আহবান জানান। এই মুসলিম জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় মিয়ানমারে ‘সেইফ জোন’ গড়ে তোলার প্রস্তাবও দেন তিনি।

 

 

 

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০