ঢাকার বসবাসযোগ্যতার উন্নয়নে উদ্যোগ নিন

শহর হিসেবে ঢাকার অতীত ঐতিহ্য রয়েছে। ৪০০ বছরের পুরোনো এ শহর মোগল আমল থেকে এ পর্যন্ত কয়েকবার রাজধানীর মর্যাদা পেয়েছে। এখনও রাজধানীর মর্যাদা অক্ষুণ্ন রয়েছে। দেশের বর্ধনশীল শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা শীর্ষে। বর্তমানে এর জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি।

কিন্তু গতকালের জাতীয় দৈনিকগুলোয় এক হতাশাজনক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। তা হলোÑ বিশ্বের বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় আরও নিচে নামল ঢাকা। বিশ্বের বসবাসযোগ্য ১৭৩টি শহরের তালিকায় দুই ধাপ অবনতি ঘটেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার। গত বছর এ তালিকায় ১৬৬তম স্থানে থাকলেও চলতি বছর দুই ধাপ পিছিয়ে ১৬৮তম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। বুধবার যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাময়িকী দি ইকোনমিস্টের সহযোগী গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) প্রকাশিত বিশ্বের বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় এই তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা এ বছর পাকিস্তানের করাচির একধাপ ওপরে এবং জিম্বাবুয়ের হারারে শহরের একধাপ নিচে  রয়েছে।

প্রত্যেক বছর বাসযোগ্যতার বিচারে বিশ্বের বড় শহরগুলোর তালিকা প্রকাশ করে ইআইইউ। স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামোÑএই পাঁচ সূচকের ওপর ভিত্তি করে বাসযোগ্য শহরের তালিকা তৈরি করা হয়। ইআইইউ’র তালিকায় এ বছর ১৬৮তম স্থানে থাকা ঢাকার অবনতির প্রধান কারণ ছিল শিক্ষার সহজলভ্যতা ও গুণগত মানের পতন। এ বছর স্থিতিশীলতায় ৫০, স্বাস্থ্যসেবায় ৪১ দশমিক ৭, সংস্কৃতি ও পরিবেশে ৪০ দশমিক ৫, শিক্ষায় ৬৬ দশমিক ৭ এবং অবকাঠামোতে ২৬ দশমিক ৮ পয়েন্ট পেয়েছে ঢাকা। অনেক দিন ধরে রাজধানীবাসী তথা দেশবাসী শুনছে, ঢাকাকে বাসযোগ্য পরিকল্পিত শহর গড়ার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কী সুফল পেয়েছে নগরবাসীÑসেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে প্রতি বছরই বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর গবেষণা জরিপ অনুসারে বাসযোগ্য শহরের তালিকার নিচের দিকেই রয়েছে দেশের প্রধান শহরটি।

অবস্থান নিরূপণে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েছে ইকোনমিস্ট, সেগুলো হলো শহরের স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা ও অবকাঠামো। জীবনযাত্রার জন্য এগুলোর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ঢাকায় বসবাসকারীরা এসব নাগরিক সুবিধা যথানিয়মে পাচ্ছে কি নাÑনিজেদের এ প্রশ্ন করলে খোদ কর্তৃপক্ষগুলোর বিবেচক কর্মকর্তারা বিব্রত হবেন বলে ধারণা। নাগরিকদের স্বস্তি দিতে কর্তৃপক্ষের উচিত হবে সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া।   

ঢাকাকে আরও বাসযোগ্য ও উন্নত শহর হিসেবে গড়তে রাজউক প্রণয়ন করেছে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)। এটি বাস্তবায়ন করলে নগরে জলাভূমি সংরক্ষণ, উন্নত বাসস্থান, প্রশস্ত সড়ক, উš§ুক্ত স্থান, বিনোদনকেন্দ্রসহ নাগরিক সুবিধাগুলো নিশ্চিত হবে। দুঃখজনক বিষয় হলো, মশা, বায়ুদূষণ ও জলাবদ্ধতা  রোধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিতে হয় উচ্চ আদালতকে। যানজট, জলাবদ্ধতা, পয়োনিষ্কাশন, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ দূষণ রোধে বাস্তবোচিত ও সমন্বিত ব্যবস্থা নিলেও ঢাকা বাস-অযোগ্য শহরের তালিকায় থাকবে না, এটির নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। তবে পরের বছর থেকে ইআইইউ’র তালিকায় ঢাকার উন্নতি ঘটবে, বলেই প্রত্যাশা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০