সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম জেলায় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহকদের ২০১৭ সালে প্রতি মাসে ১৭৮ থেকে ১৯০ মিলিয়ন ঘনমিটার সরবরাহ করতে পারত। এরপর ২০১৮ সালের মে মাসে চট্টগ্রাম দিয়ে এলএনজি আমদানি শুরু হয়েছিল। বর্তমানে চট্টগ্রাম দিয়ে প্রতিদিন এলএনজি গ্যাস আমদানি করা হয় প্রায় ৫০ কোটি ঘনফুট, যদিও গ্যাস সক্ষমতা ১০০ কোটি ঘনফুট। গত এপ্রিল মাসে কেজিডিসিএল সরবরাহ করেছিল মাত্র ২০৬ মিলিয়ন ঘনমিটার। অর্থাৎ এলএনজি গ্যাস আমদানির পর থেকে চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ তেমন বাড়েনি। যদিও চট্টগ্রামে প্রতি মাসে ৪০০ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাসের চাহিদা রয়েছে।
কেজিডিসিএল সূত্র জানা যায়, চট্টগ্রামের বর্তমানে প্রতি মাসে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪০০ মিলিয়ন বা ৪০ কোটি ঘনমিটার। কেজিডিসিএল সরবরাহ করে প্রায় ২০০ থেকে ২১০ মিলিয়ন বা ২০ থেকে ২১ কোটি ঘনমিটার। অথচ চট্টগ্রাম দিয়ে প্রতিদিন এলএনজি গ্যাস আমদানি করা হয় প্রায় ৫০ কোটি ঘনফুট (একটি টার্মিনাল বন্ধ থাকায়)। যদিও গ্যাস সক্ষমতা ১০০ কোটি ঘনফুট। চট্টগ্রাম জেলায় বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এলএনসি গ্যাসের মাধ্যমে ৯৯ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এর বিকল্প হিসাবে রাখা হয়নি দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া গ্যাসের সংযোগ। ফলে মেরামত বা আমদানিতে জটিলতায় সংকটে পড়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের গ্যাস ব্যবহারকারী।
মাসিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম জেলায় আবাসিক, শিল্প-কলকারখানা, বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনের ছয় লাখ এক হাজার ২৮ গ্রাহকের কাছে ২০৬ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করা হয়, যার পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাস থেকে সংগ্রহ করা। অথচ মাসে চট্টগ্রাম জেলায় সরবরাহকৃত গ্যাসের পরিমাণ ছিল ২২০ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে সরবরাহ কমেছে প্রায় ১৪ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস। বর্তমানে চট্টগ্রামে দৈনিক গড়ে ৪০ কোটি ঘনমিটার চাহিদার বিপরীতে কয়েক মাস পাওয়া গেছে ২৮ থেকে ৩০ কোটি ঘনমিটার। আর সংস্থাটির সরবরাহ করা গ্যাসের ৯৯ দশমিক ২৯ শতাংশই গৃহস্থালি বা আবাসিক গ্রাহক। এছাড়া শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ বা দুই হাজার ৮৩৭ বাণিজ্যিক গ্রাহক, এক হাজার ১৬০ শিল্প গ্রাহক, ২০৫ ক্যাপটিভ পাওয়ার গ্রাহক, ৭০ সিএনজি ফিলিং স্টেশনের গ্রাহক, ছয় বিদ্যুৎ, চার সার কারখানার গ্রাহক এবং দুই চা বাগান গ্রাহক।
গ্যাস বিতরণ সংস্থার মতে, আমদানি করা এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশনের পর পাইপলাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের জন্য দেশে ভাসমান টার্মিনাল (ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট বা এফএসআরইউ) আছে দুটি। সংস্কারজনিত কারণে এর একটি থেকে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে মে থেকে। অন্যটি প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সরবরাহ কমে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহকরা।
কেজিডিসিএলের একজন গ্রাহক মাহবুবুল আলম বলেন, এলএনজি গ্যাস আমদানির পরও পরিস্থিতির তেমন উন্নয়ন হয়নি, যা হতাশাজনক।
গ্যাস সংকটের বিষয়ে একাধিক স্টিল ও সিমেন্ট কারখানার উদ্যোক্তা বলেন, ‘কয়েক মাস ধরেই গ্যাসের সংকট রয়েছে। গত কয়েক দিন গ্যাসের চাপ কম থাকায় আমরা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছি। এভাবে কারখানা চালিয়ে উৎপাদন ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে পণ্যমূল্য খরচ বেড়ে যাবে। গ্যাস সংকট থাকায় আমাদের মতো অন্যান্য গ্যাসনির্ভর ভারী ইস্পাত ও সিমেন্ট কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাসের বিকল্প উৎপাদন পদ্ধতির চিন্তাভাবনা করছে। যদিও গ্যাসনির্ভর কারখানা অন্য জ্বালানিতে রূপান্তর সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।’
এ বিষয়ে কেজিডিসিএলের এমডি আবু সাকলায়েনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানান, তিনি মিটিং আছেন, পরে যোগাযোগ করবেন। কিন্তু পরে আর যোগাযোগ করেননি।
অপরদিকে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলেন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির চুক্তি করছে সরকার। গত বছরের জুন ও নভেম্বরে তিনটি চুক্তি হয়েছে। আরেকটি চুক্তি শিগগিরই হতে পারে। এ চারটি চুক্তির অধীনে ২০২৬ সালের জুন থেকে আমদানি করা এলএনজি সরবরাহের কথা দিনে ১৭০ কোটি ঘনফুট। এখন সক্ষমতা রয়েছে ১১০ কোটি ঘনফুট। তবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সরবরাহ করা হয়েছে দিনে ৯০ কোটি ঘনফুটের কম। আর বাড়তি গ্যাস তরল অবস্থায় এনে তা রূপান্তরের জন্য নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, এলএনজি আমদানির পরও চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ তেমন বাড়েনি। চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি আমদানিনির্ভর গ্যাস হওয়ায় ঝুঁকি বেশি। উচিত ছিল গ্যাসক‚প খননে মনোযোগী হওয়া। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই।