বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার: রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্ধারণ না করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট গত জুলাইয়ে বিশেষ সভা করে যে উপাচার্য প্যানেলের অনুমোদন দিয়েছিল, তা অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে আগামী ছয় মাসের মধ্যে ‘যথাযথ প্রক্রিয়ায়’ নতুন সিনেট গঠন করতে কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় দেন।
আদালতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে হাইকোর্টে এ বিষয়ে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী। আর রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্বাচনে তিন সদস্যের প্যানেল মনোনীত করতে গত ২৯ জুলাই সিনেটের বিশেষ সভা ডাকা হয়। ওই বিশেষ সভার নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষকসহ ১৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট একটি রিট করেন।
১৯৭৩-এর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট সদস্যরা ভোট দিয়ে তিনজনের একটি উপাচার্য প্যানেল ঠিক করেন, তার মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য পদে নিয়োগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বা রাষ্ট্রপতি।
সিনেটে ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিত্ব থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের মধ্য থেকেও ২৫ জন প্রতিনিধি এ সিনেটে থাকেন। কিন্তু রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্ধারণ বা নির্বাচন না করেই ২৯ জুলাই ওই সিনেট সভা ডাকা হয়।
রিট আবেদনকারীদের বক্তব্য শুনে গত ২৪ জুলাই বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি মোহাম্মদ ফারুকের হাইকোর্ট বেঞ্চ সিনেট সভা স্থগিত করে দেয়। সেই সঙ্গে ওই সভা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহিভর্‚ত এবং সভা আহবান করে দেওয়া নোটিশ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল দেন হাইকোর্ট। উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, প্রো-ভিসি (শিক্ষা), প্রো-ভিসি (প্রশাসন), রেজিস্ট্রার ও শিক্ষাসচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চেম্বার আদালতে গেলে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে বিষয়টি ৩০ জুলাই শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
এদিকে ২৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী ভবনে ‘বিশেষ সিনেটের সভা’ বসে। বিএনপিপন্থি সমর্থকদের বর্জন, সরকার সমর্থকদের একাংশের আপত্তি এবং শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে ওই সভায় ভোট ছাড়াই উপাচার্য প্যানেল চূড়ান্ত করা হয়। বিকল্প কোনো প্রস্তাব সভায় না আসায় অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও নীল দলের আহবায়ক আবদুল আজিজকে নিয়ে তিন সদস্যের প্যানেলই ?সিনেটের অনুমোদন পায়।
নিয়ম অনুযায়ী ওই তিনজনের মধ্য থেকেই একজনকে পরবর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল রাষ্ট্রপতির। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত ৩ আগস্ট সিনেটে মনোনীত ওই প্যানেলের পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়।
রুলি নিষ্পত্তির আগেই ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের ১১ (২) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্যানেলের বাইরে থেকে অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেন। আর আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী শুনানি করে হাইকোর্ট গতকাল সিনেটের ওই সভা ও প্যানেল অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।